Sunday, August 5, 2012

পরিবারের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে উপদেশ -আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসী

"....এবং আমি আপনাদের রসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীটি মনে করিয়ে দিতে চাইঃ "যে ঈমানদারদের সাথে মিশে এবং তার উপর যে ক্ষতি চাপিয়ে দেয়া হয় তাতে সে ধৈর্য্য ধারণ করে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম; যে লোকদের সাথে মিশে না এবং তার উপর চাপিয়ে দেয়া ক্ষতিতে সে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে না।" বর্ণনাকারী ইবনে উমার, আহমেদ এবং অন্যদের থেকে উদ্ধৃত।

এর উপর ভিত্তি করে, আমি আপনাদের উপদেশ দেই নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করুন। তাদের ক্ষতিতে নিজেকে অবিচল রাখুন। দাওয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এবং তাদেরকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। ঠিক এই আয়াতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

"হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবার পরিজনদের জাহান্নামের সেই আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ আর পাথর, সেই জাহান্নামের প্রহরা দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত, সেই ফেরেশতারা সবাই হচ্ছে নির্মম এবং কঠোর, তারা দন্ডাদেশ জারির ক্ষেত্রে আল্লাহর কোন আদেশই অমান্য করবে না, তারা তাই করবে যা তাদের আদেশ করা হবে।" [সুরা তাহরীম- ০৬]

আমি আশা করি আপনারা ঘর-বাড়ী ছেড়ে যাওয়া এবং তাদের ত্যাগ করার কথা চিন্ত্মা করছেন না। দাওয়ার সবগুলো মাধ্যম ব্যবহার করার পরও, বিশেষভাবে যদি তাদের সাথে অবস্থান করা যায়, এটা তাদের অল্প কয়েকজনের মধ্যে হলেও একটা প্রভাব ফেলবে।

দাওয়ার শুরুটা যেন কোনভাবেই কর্কশ এবং চূড়ান্ত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এতে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। বরং তাদের সাথে কথা বলুন প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং কোমলতার সাথে যাতে তারা সহজেই বুঝতে পারে, যেখানে মহান আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা'য়ালা বলেনঃ

"হে নবী, তুমি তোমার মালিকের পথে মানুষকে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করো, তুমি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তি তর্ক করো যা উৎকৃষ্ট পন্থা।"
 [সুরা নাহল-১২৫]

এবং রসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীসটির কথা মনে রাখুনঃ "মানুষদের সুসংবাদ দাও এবং তাদের অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যেও না", এবং "বস্তুত, কোন জিনিসে কোমলতা খুজে পাওয়া যায় না যা তার সোন্দর্য্য ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না এবং কোন কিছু থেকে এটা অপসারিত হয় না এই ব্যতীত যে এটা তার বিনাশ করে ছাড়ে।" (অনুবাদকঃ অন্যকথায় কোমলতা কোন জিনিসের সৌন্দর্য্যই বৃদ্ধি করে আর কঠোরতা কোন জিনিসকে কুৎসিত করে ফেলে)।

দাওয়ার শুরু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে করার চেষ্টা করুন এবং এটা নিয়ে ক্রমানুসারে এগুতে থাকুন। দ্বিতীয় শ্রেণীর কথা নিয়ে যুক্তিতর্কে যাওয়া যাবে না যেখানে মূল বিষয়টা বিভ্রান্ত্মিতে পড়ে থাকে। এর পরিবর্তে মূলনীতিগুলোকে আগে পরিচয় করিয়ে দিন এবং যদি আপনি দ্বিতীয় শ্রেণীর বিষয়গুলোকে দিয়ে এর সমাধান করেন, তাহলে এটাকে মূলবিষয়ের সাথে একত্রে সম্পৃক্ত করুন এবং আপনার শত্রুতা তৈরি করবেন না যতক্ষন না এটা প্রাথমিক মূলভিত্তি দ্বীন, তাওহীদ এবং এগুলো ভঙ্গকারী এবং যা এর সুদৃঢ় বন্ধনকে ভেঙ্গে ফেলে ...।


============= শাইখের উপদেশ শেষ ==================

এ বিষয়ে পর্যালোচনাঃ


আমাদের নিজেদের পরিবারে সবারই এই দিকনির্দেশন অনুসরণ করা উচিত। আমাদেরকে তাদের সাথে খুব কঠোর কিংবা কর্কশ হওয়া উচিত হবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, অনেকেই মানুষের সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে খুব সুন্দর সমাধানে আসেন কিন্ত্মু পরিবারের সাথে আসলেই তখন আর তাদের ভারসাম্য ঠিক থাকে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অজ্ঞতার কারনে অনেকের পরিবারের সদস্যরা আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরক-কুফরে জড়িয়ে গেছে, তাদের কে ভাল ভাবে না বুঝিয়েই তাদেরকে পরিত্যাগ করে, তাদেরকে কাফের ঘোষনা করে নিজেদের আলাদা করে ফেলেছে যা একদম সঠিক নয়। বরং তাদেরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তা বুঝান এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবেন না। আপনি চেষ্টা করতেই থাকুন, করতেই থাকুন উত্তমভাবে। দেখবেন তারা প্রথমত সব জিনিস গ্রহন না করলেও হয়তো বিরোধিতা করছে না, নীরব থাকছে, না বুঝার কারনে তর্ক করছে, আপনি সবরের সাথে তা মোকাবিলা করুন, আপনি বুঝাতে চেষ্টা করুন আপনি যে তার কল্যান কামী, আপনি নিজের যেমন কল্যান চান অনুরূপ কল্যান তারও চান। দেখবেন আল্লাহর অনুগ্রহে তাঁর হৃদয় খুলে যেতে পারে, সে দ্বীনের পথে আপনার বড় সাহায্যকারী হতে পারে।

আমাদের পরিবার যারা মুসলিম তাদের সাথে আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে হবে, তাদের প্রতি আমাদের ধৈর্য্য (সবর) অবশ্যই হতে হবে অনেক বড়। আমরা তাদের ভুল ও অজুহাতগুলোকে ক্ষমা করে দিবো।

যদি আমরা লোকদের সাথে না মিশি তাহলে আমরা যেই ইলম অর্জন করছি তার প্রয়োগ কিভাবে করব? ইলম অর্জন করা খুব সহজ। কিন্ত্মু আপনি যেই ইলম অর্জন করছেন, তাকে বাস্ত্মব জীবনে কাজে লাগাতে হবে, অন্যথায় আপনি কিছুই শিখলেন না। পরিবারের সদস্যরাই সবচেয়ে কঠিন মানুষ, কারণ তারা মনে করে যে, তারা প্রত্যেককে তাদের অন্তর দিয়ে চিনে এবং তাদের ইচ্ছাগুলো জানে।

হামদুন আল-কাস্*সার, প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারী একজন মহৎ মুসলিম বলেনঃ "যদি তোমার বন্ধুদের মধ্যে কোন বন্ধু ভুল করে, তাদের জন্য ৭০টি অজুহাত তৈরি কর। যদি তোমার অন্তর তা করতে সম্মত না হয়, তাহলে জেনে রেখো যে, এর ব্যর্থতা, ত্রুটি বিচ্যুতি তোমার নিজের।" [ইমাম বায়হাকি, শুয়াব আল-ঈমান ৭/৫২২]

নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "তোমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজের পরিবারের নিকট সর্বোত্তম।" সুতরাং তাদের প্রতি সদয় হোন এবং তাদের ব্যাপারে মনোযোগ দিন।

No comments:

Post a Comment