Sunday, August 5, 2012

জিহাদ সম্পর্কিত ভ্রান্তধারণাঃ জিহাদ আন-নাফস হচ্ছে সবচেয়ে বড় (আফজাল) জিহাদ



“আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম বড় জিহাদের (নফসের বিরুদ্ধে)-দিকে।”-এই হাদীসটি সঠিক নয় এটি হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে কেউ এটি বর্ণনা করেননি।

ইবন তাইমিয়্যাহ্ (রহ.) বলেনঃ

“আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম বড় জিহাদের (নফসের বিরুদ্ধে)-দিকে।” -হাদীসটি জাল হাদীস এবং এটি কোন হাদীস বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত নয়, যাদের রাসূলুললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী, তাঁর পদক্ষেপ এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর জিহাদ সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে । প্রকৃত পক্ষে কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধই হল সবচেয়ে প্রধান কাজ। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বড় কাজ করা সম্ভব নয়।

জিহাদ বলতে যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করাকেই বোঝানো হয়েছে তার কয়েকটি প্রমাণঃ

১. নারীদের প্রতিবাদঃ যখন নারীরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলেন এবং অভিযোগ করলেন যে পুরুষরা জিহাদে অংশ নেয় কিন্তু আমরা নেই না তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে মহিলাদের জিহাদ হল হজ্জ। এখানে এটি ষ্পষ্ট যে জিহাদের অর্থ হল লড়াই করা। যদি এর মানে আত্মার সাথে যুদ্ধ করাই হত তবে কেন মহিলারা তা করতে পারেনা?

২. সালাফ আলেমগনের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থের শুধুমাত্র সূচিপত্রের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তাদের বইয়ে জিহাদ শিরোনামের অধ্যায়ে জিহাদের অর্থ হল যুদ্ধ করা। তারা যদি এর অন্য অর্থ বুঝতো তবে তা তাদের লেখায় ফুটে উটত। আমার বক্তব্যের প্রমান চাইরে তুমি এই বইগুলো খুঁজে দেখ- তারা প্রত্যেকেই এই লড়াইকে জিহাদ বলেছেন ‘ক্বিতাল’ বলেননি ঃ ‘‘আল মুগনী’’ (ইবনে কুদামাহ); ‘‘আল উম্ম’’ (ইমাম শাফিঈ); ‘‘আল মুদাওয়ানাহ’’ (ইমমে মালিক); ‘‘আল মুখতাসার খালিল’’-এর তিনটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ (আল খারশি); ‘‘আলায়শ এবং আল হাতাব- আল মুহালা’’ (ইবন হাযম); ‘‘সুবুল আল সালাম,’’ ‘‘নায়ল আল আওতার’’এবং ‘‘আল ফাতাওয়া আল কুবরা’’ (ইবন তাইমিয়্যাহ)।

৩. জিহাদ সম্পর্কীয় এই হাদীছ গুলি শুধু যুদ্ধকেই বুঝায়। উদাহরণ স্বরূপ:

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হয়, “জিহাদের সমতুল্য কোন আমল আছে কি?” তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ কিন্তু তুমি তা করতে সক্ষম হবে না।” এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন, অতঃপর তিনি বললেন, “মুজাহিদের সমতুল্য ঐ ব্যক্তি যে ততক্ষণ পর্যন্ত অনবরত সিয়াম করে এবং সলাত পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই মুজাহিদ ফিরে আসে।” (মুসলিম) । অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে। অত্মার সাথে যুদ্ধই যদি জিহাদ হতো তাহলে তা থেকে ফিরে আসার প্রশ্ন কেন আসবে?

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হয়, “হে আল্লাহর রসূল আমাকে এমন আমলের নির্দেশ দিন যা জিহাদের সমতুল্য।” তিনি বললেন, “এমন কিছুই আমি খুঁজে পাইনা।” অতঃপর তিনি বললেন, “যখন মুজাহিদ জিহাদে যায়, তখন কি তুমি মসজিদে প্রবেশ করে অনবরত কোন প্রকার বিরতি ছাড়াই সলাত পড়তে এবং সিয়াম রাখতে পারবে?” (বুখারী)

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে একবার একজন সাহাবা একটি উপত্যকার পাশ দিয়ে যাচিছলেন যেখানে পরিষ্কার পানির ঝরনা প্রবাহিত ছিল। তিনি বললেন যদি আমি আমাকে মানুষদের থেকে নিজেকে নিঃসঙ্গ করতাম এবং এই উপত্যকায় বসবাস করতে (আল্লাহর ইবাদত করতে) পারতাম; কিন্তু আমি রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত তা করব না। রাসূলুললহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এটা করোনা, নিজ বাড়িতে ৭০ বছর সলাত পড়ার চেয়ে আল্লাহর রাস্তায় অবস্থান করা অনেক বেশী উত্তম। তুমি কি চাওনা যে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতে দাখিল করুন? যুদ্ধ করো (ইক্বযু) আল্লাহর রাস্তায়;কারণ যে একটি উটকে দুধপান করানোর সমান সময়ও আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ (কতল) করবে, জান্নাত তার জন্য নিশ্চিত করা হবে।” (তিরমিযী সাহীহ)। সুতরাং এই সাহাবী যে নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নির্জনবাসী হতে চেয়েছিল,তাকে তা করতে নিষেধ করা হল।

No comments:

Post a Comment