Tuesday, July 19, 2011

What Is Islam?

পরম করুনাময় মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। সকল প্রশংসা সেই মহান সত্তার যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। দুরুদ পেশ করছি প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সা) এর উপর।
আসসালামু আলাইকুম। আমি পূর্বে কোন প্রবন্ধ লিখিনি। কিন্তু সময়ের প্রয়জনে লেখাটা জরুরী মনে করছি। যদিও আমার পুর্বেই অনেকে এই বিষয়ে বলেছেন অথবা লিখেছেন। এখানে আমি শুধু আমার মতামত তুলে ধরছি। যেহেতু এটা আমার প্রথম লেখা এবং যে বিষয়ে আমি লিখতে চাচ্ছি সে সম্পর্কে আমার জ্ঞান তুলনামুলক কম তাই যদি কেউ ভুল পান তাহলে সেটা জানালে আমি কৃতজ্ঞ থাকব এবং পরবর্তিতে ভুলটা শুধরাতে পারব।


    ইসলাম অর্থ কি? আর কি শেখানো হয়েছে আমাদের?
ছোটকাল থেকেই আমরা জানি যে ইসলাম অর্থ শান্তি……আসলেই কি ইসলাম অর্থ শান্তি? মূলত সেই ছোট্টকাল থেকে আমাদের এটাই শিখানো হচ্ছে। কখোনো বাবা মা কখনো স্কুলের ধর্ম শিক্ষক আবার কখনো এলাকার মসজিদের মৌলভি আমাদের কানের কাছে ‘ইসলামের অর্থ শান্তি’ কথাটা অনবরত পাঠ করছেন। আর আমরাও কথাটা যাচাই না করে এই অর্থই আমাদের মনের মধ্যে গেথে নিয়েছি এবং পরবর্তিতে আমাদের অধিনস্তদের কানে তোতা পাখির মত এটা আওড়াতে থাকি। আমাদেরই বা কি দোষ? যখন থেকে বোঝা শিখেছি তখন থেকে আমাদের মস্তিস্কটাকে পরনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হচ্ছে…আমরা তাই বুঝি যা আমদের বুঝানো হয়। আমাদের সুযোগ দেয়া হয় না কোন প্রশ্ন করার……প্রশ্ন করার আগেই শেখানো হয় গুরুজনের সম্মান কিভাবে করতে হয়। যদি কেউ প্রশ্ন করে তাহলে তার গায়ে ‘ইচড়েঁ পাকা’ উপাধি দেয়া হয়। গুরুজনের প্রতি সম্মানে আমার কোন বিতৃষ্ণা নেই…………তবে প্রশ্ন করলে কিভাবে গুরুজনে অসম্মান হয় তা আমার বুঝে আসে না……হয়তোবা আমার মস্তিস্ক এটা বোঝার মত যথেষ্ট  নয়…!!
যা হোক যেটা বলছিলাম……ইসলাম অর্থ কি? ইসলামের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পন করা, কারো কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া। পারিভাষিক অর্থ কোন সংশয় ছাড়া আল্লাহ তায়ালা কে স্রস্টা, ইবাদতের একমাত্র সত্তা হিসাবে মানা এবং তাঁর আদেশ নিষেধ জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। সংক্ষেপে বলা যায় নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সপেঁ দেয়া।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে এতদিন আমরা যা জেনেছি সেটা কোথা হতে আসলো? কোথা হতে আসলো সেটা থেকে কেন আসলো সেটা জানা জরুরী। আমার ধারনা তাতেই মোটামুটি সবার সব প্রশ্নের উত্তর হবে…
ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ বছর ধরে উপমহাদেশ শাসন করেছে। তারা  ক্ষমতায় থাকলেও প্রথমদিকে তাদের শাসন ব্যবস্থা ঠিকমত কার্যকরী হয়ে উঠছিল না। এজন্য তারা এখানে গোয়েন্দা পাঠায় এর কারন ও সমাধান খুজে বের করতে। তারা রিপোর্ট করে যে শুধু মুসলমান ছাড়া এখানে অন্য কেউ সমস্যার সৃষ্টি করছে না। সমাধান হল ৩টি……মুসলমানদের প্রাণ কোরান ধবংশ করতে হবে, তাদের দীন শিক্ষার স্থানগুলো মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে, তাদের আলেমদের হত্যা করতে হবে।  কারন তখনকার মুসলিমদের অধিকাংশ তাদের মেনে নেয় নি। ওই সময়ের আলেম সমাজ এ বিষয়ে ছিল বেশী সোচ্ছার। ইংরেজরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কিছু নির্মম নীতি গ্রহন করে।
আসুন তাদের নির্মমতার চিত্র আমরা তাদের একজন ঐতিহাসিকের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি……
ঐতিহাসিক ড. টামসন বলেছেন, “দীল্লির শাহী মসজীদ ও লাহোরের জামে মসজীদের সামনে প্রায় ৩ লক্ষ কোরান পুড়ানো হয়। এখানকার অধিকাংশ জায়গা ছিলো মুসলমানদের মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দকৃত। সকল ওয়াকফকৃত জমি বাতিল করে তা হিন্দুদের জমিদারীতে দেওয়া হয়। যে মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোর অস্তিত্ত তখন ছিল সেগুলো ধবংশ করা হয়। কিছু বড় বড় মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোকে রেখে ঘোড়ার আস্তাবল বানানো হয়। দীল্লির চাঁদনী চক থেকে খাইবার পর্যন্ত রাস্তার দুধারে এমন কোন গাছ ছিল না যেখানে কোন আলেমকে ফাঁসীতে ঝুলানো হয় নি। আলেমদেরকে শুকরের চামড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে ঘোড়ার পায়ের সাথে বেধে হত্যা করা হয়েছে।” তিনি বলেছেন, “আমার তাবুতে গিয়ে আমি মানুষ পোড়া গন্ধ পেলাম। তাবুর পিছনে দেখি ৪০ জন আলেমকে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। সামনে আরো ৪০ জন আলেমকে ধরে বলা হচ্ছে ইংরেজদের আনুগত্য করতে অথবা আগের ৪০ আলেমদের পরিনতি গ্রহন করতে। আমার সৃষ্টিকর্তার কছম প্রত্যেক আলেম আগুনে পুড়তে রাজী হল কিন্তু কেউ ইংরেজদের আনুগত্য মেনে নেয় নি।”
এরপরও যখন কাজ হল না, তখন তারা সময়ের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়। তা হল তাদের পক্ষে কিছু আলেম তৈরি করা। এজন্য পুনরায় তারা কিছু মসজিদ মাদ্রাসা তৈরী করে সেখানে তারা তাদের নিজস্ব সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া শুরু করে। আর এখানেই তারা ইসলামের কিছু শব্দের পরিভাষার পরিবর্তন করে। যেগুলো আমরা আবহমান কাল ধরে স্মৃতিসরূপ আমাদের ধর্মে বয়ে নিয়ে আসছি!!! শুধুমাত্র উপমহাদেশেই এই অর্থগুলো প্রচলিত ছিল।
আমরা যেটা দেখতে পাই তখন ইংরেজরা ও তাদের সহযোগী কিছু নামধারী মুসলিমরা এই পরিবর্তনগুলো এনেছিল যাতে মুসলমানেরা মাথা তুলে না দাড়াতে পারে। এখন আবার মুসলমানেরা মাথা তুলে দাড়াতে চাইছে…শুধু উপমহাদেশে নয় সারা বিশ্বে…
এবার আসুন আমরা জর্জ বুশ বা তার চেলাদের ইসলাম সম্মন্ধে বক্তব্য দেখি………তাদের বক্তব্য হল ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রতিবাদ করা বা অন্যায় প্রতিহত করা ইসলামের কাজ না…ইসলাম ঘরের মধ্যে পালন করার জন্য…দরজার বাইরে পা ফেললে ইসলাম পালন করার কোন প্রয়োজন নেই।  আর আমাদের কিছু নামধারী মুসলীম তাদের সাথে গলা মিলায়।


দেখুন তো তাদের করা ইসলামের অর্থ সেই ১৮ শতকের ইংরেজদের মত লাগে কিনা……এক না লাগাটাই অস্বাভাবিক ছিল…কেননা সময়টা আলাদা হলেও উদ্দেশ্য তো একই!!!
অথচ ‘হানসভে’ নামক এক খ্রিস্টানের করা বিখ্যাত আরবী-ইংরাজী অভীধানে ইসলামের অর্থ কি করেছেন দেখুনঃ Submission, to the will of God. অর্থাৎ আল্লাহর কাছে বশ্যতা স্বীকার বা আত্মসমর্পন করা।(a dictionary to modern written Arabic.)


          তারা শুধু ইসলামের কিছু শব্দের পরিভাষা পরিবর্তন করে ক্ষান্ত হলেও একটা কথা ছিল। তারা ইসলামের মধ্যেই পরিবর্তন আনার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান ও তাদের সাহায্য কিছু মুনাফিক তৈরী করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ হল তাদের মনমত কোরানের অর্থ এবং জাল হাদিস তৈরী করে সেগুলো মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া।
তাই বলি, কেউ কিছু বললে সেটা বিশ্বাস না করে নিজে একটু যাচাই করে দেখুন না…আল্লাহ তো পড়ার মত যথেষ্ট ক্ষমতা আপনাকে দিয়েছেন…
হ্যাঁ, এটা ঠিক, ইসলাম জীবনে শান্তি বয়ে আনে। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাড়াব না…প্রতিবাদ করব না কোন অত্যাচারের। আমি বলি ইসলাম তাদের জন্য না যারা ভাবে ইসলাম হল ঘরে বসে ইবাদত করতে করতে কুজো হয়ে যাওয়া, শ্বেতশুভ্র পোষাক পরে লম্বা দাড়ী রেখে সুফি হয়ে যাওয়া। রাসুল (সা) এর জীবনী দেখুন। হযরত ঊমরের (রা) এর জীবনী পড়ুন…দয়া করে কারো কাছে শুনবেন না…নিজে পড়ার চেষ্টা করুন সহীহ হাদিস থেকে…দেখুন তাঁরা ইসলামের অর্থটা কেমন ভাবে তাদের জীবন থেকে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন।
কথায় কথায় অনেক কথা বললাম। কাউকে অপমান করা বা খোঁচা দেওয়া আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। এরপরও যদি কাউকে অজান্তে আঘাত করে থাকি তাহলে তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।


আমি জানি না ইসলামের অর্থ কতটা আপনাদের বুঝাতে সমর্থ হয়েছি। জানি না এগুলো আপনাদের কতটুকু উপকারে আসবে…যদি সামান্যতম উপকারও হই তাহলে আমার এই লেখাটা সার্থক…


মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাই তিনি যেন আমাদের সকলকে বিষয়গুলি বোঝার তৌফিক দান করেন।


আজ এই পর্যন্তই। ধারাবাহিকভাবে আরো কয়েকটি লেখা পরবর্তিতে আপনাদের সামনে পেশ করব ইনশা’আল্লাহ। আশা করি সবসময় আপনাদের সাথে পাব।


          আল্লাহর কাছে লাখো শোকর জ্ঞাপন করছি যার অসীম করুণাতে আমি আমার এই লেখাটা লিখতে পেরেছি। অতঃপর ধন্যবাদ জানাই তাদেরকে যাদের বক্তব্য ও লেখা আমাকে বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করেছে।


                                                                                      জাজাকাল্লাহ খায়ের।

No comments:

Post a Comment