Saturday, February 13, 2016

সেইন্ট ভ্যালেন্টাই'স ডে-এর ইতিহাস

 

সেইন্ট ভ্যালেন্টাই'স ডে-এর ইতিহাস

যা জানা অপরিহার্যঃ
প্যাগান (সূর্য পূজারী) অধ্যুষিত রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে রোমিউলাস নামক এক ব্যক্তি ছিল। একদা রোমিউলাস নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এই পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী উৎসব পালন করত। প্যাগান দেবতা Lupercus ছিল তাদের বন্য পশু ও মেষ দেবতা। আর দেবতার প্রতি ভালবাসা জানিয়ে তারা ‘লুপারক্যালিয়া’ (Lupercalia) নামক পুজা উৎসব করতো। এই ‘লুপারক্যালিয়া’ উৎসব আগে ফেব্রুয়া (Februa) নামে পরিচিত ছিল, এবং যেখান থেকে February মাসের উৎপত্তি। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারিতেরোমানরা এই ‘লুপারক্যালিয়া’ পুজার উৎসব পালন করতো যার মূল দিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী। দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। উৎসবের দিন তারা একটি কুকুর ও একটি পাঠা বলি দিতদুজন শক্তিশালী যুবক বলির রক্ত সারা গায়ে মাখতো এবং পরে তা দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলত। অত:পর সেই দুই শক্তিশালী যুবকের নেতৃত্বে শহরে প্যারেড অনুষ্ঠিত হতো। উৎসর্গিত ছাগল ও কুকুরের রক্তে রঞ্জিত ও সামান্য ছাগলের চামড়া পরিহিত সেই দুই যুবক একই চামড়ার তৈরি বেত দিয়ে যুবতীদের প্রহার করতো। রোমান নারীরা এই আঘাত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করতো। কেননা তারা বিশ্বাস করত, এর ফলে তারা ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্ব থেকে রক্ষা পাবে, আর বন্ধ্যা মহিলারা তাদের অনুর্বরতা থেকে মুক্তি পাবে। লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। বিনোদন ও আনন্দের জন্য যুবকদের মাঝে যুবতীদের বণ্টন করে দেয়াই ছিল এ লটারির লক্ষ্য। পরবর্তী বছর আবার লটারি না হওয়া পর্যন্ত যুবকেরা এ ‘সুযোগ’ পেত। পরবর্তীতে প্যাগান নেকড়ে দেবী Lupa-কে সন্তুষ্ট করার জন্যে Lupercalia-র দিনেই Human Blood-Sacrifice শুরু হয় কারন, প্যাগান ধর্ম মতে Human Sacrifice না করলে দেবী লুপা নিষ্পাপ এতিম শিশুদেরকে রক্ত শুষে হত্যা করতো।

লুপারক্যালিয়া যেভাবে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স ডে হলোঃ
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেইন্ট ভ্যালেইন্টাইন নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার ধারণা ছিল, বিবাহ বাধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয়। সে সময় রোমের খ্রিষ্টান গির্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ রাজার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে নারী-পুরুষের বিবাহ বাধনের কাজ সম্পন্ন করতেন। তার এ কাজটি খৃষ্টান ধর্ম প্রচারে প্রচন্ড সহায়ক ছিল কারন, কুমারী সন্তানের বাবা-মা কখনো মন থেকে চাইত না যে তাদের সন্তান লটারির মাধ্যমে অন্যের ভোগের বস্তুতে পরিণত হোক। বিয়ে তাদের কাছে সম্মানজনক সমাধান ছিলো। কিন্তু ধর্মপ্রচারক ভ্যালেন্টাইনের এ ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। রাজা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কারাগারে থাকা অবস্খায় রাজা তাকে খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেন। উল্লেখ্য, রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং প্যাগান নিয়ন্ত্রিত তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে তখন অন্য ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। যা হোক, ভ্যালেন্টাইন রাজার প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি অনুগত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। অত:পর রাজার নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর(এ্যাস্টেরিয়াস) দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। কথিত আছে, ভ্যালেন্টাইন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে ঐ মেয়েটিকে লিখেছিলেন, "Love From Your Valentine”.
১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় কারণ, Lupercalia -এর দিনে কারও Human Sacrifice করতেই হতো। আর Human Sacrifice-এর জন্যে একজন ধর্মদ্রোহীর চেয়ে উপযুক্ত ব্যাক্তি আর কে হতে পারে?

কালক্রমে রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাধান্য সৃষ্টি হলে গির্জা ভ্যালেন্টাইনকে `Saint' হিসেবে ঘোষণা করে। ৩৫০ সালে রোমের যে স্খানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে তার স্মরণে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। অবশেষে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিও ১ম জুলিয়াস ( পোপ গ্লসিয়াস ) ভ্যালেন্টা-এর স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে `Saint Valentine Day' দিবস ঘোষণা করেন। এবং সেই থেকে সেন্ট ভ্যালেন্টা' ডে উৎসব চালু হয়। ১৭১২ সালের একটি সুইডিশ ক্যালেন্ডারে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এখন, গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীর যুবতী মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলার কারণে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন'স ডে’ ঘোষণা করেননি। কারণ, খ্রিষ্ট ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই পুরোহিত হয়ে মেয়ের প্রেমে আসক্তি খ্রিষ্ট ধর্মমতে অনৈতিক কাজ। তা ছাড়া, ভালোবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে যেতে হয়নি। কারণ, তিনি কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন কারাগারে যাওয়ার পর। তার থেকে বড় কথা, "Love From Your Valentine” কথাটি শুধুমাত্র প্রেমের সম্পর্কই নির্দেশ করবে এমন কোনো দলিলভিত্তিক প্রমাণও কোথাও নেই। সুতরাং, ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদণ্ডদানের সাথে প্রেমের ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালোবাসা সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন'স ডে’র মূল বিষয় ছিল না। বরং ধর্মের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তার মৃত্যুদণ্ডের কারণ ছিল।

No comments:

Post a Comment