Sunday, August 5, 2012

শাহাদাহ বা ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’-এর সাতটি শর্ত

শাহাদাহ বা ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’-এর সাতটি শর্ত

নামাযের মত তাওহীদেরও অনেকগুলো শর্ত আছে। নামায সহীহ হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে যদি যে কোনো একটি শর্ত যেমন অজু করা বা কেবলামুখী হওয়া ইত্যাদি না পাওয়া যায় তাহলে নামায বাতিল বলে গণ্য হবে। তেমনি শাহাদাহ্ সাতটি শর্ত সম্বলিত, যা পরিপূর্ণভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগের পর আমাদের মাঝে ইসলামের প্রথম স্তম্ভ (ঈমান) স্থাপিত হওয়ার দাবী করতে পারব। এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং এর শর্তগুলো পূরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াযিব। আবদুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেনঃ- ইহা কি সত্য যে, লা ইলাহা ইল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষ্যদানই বেহেস্তে প্রবেশের চাবিকাঠি? তিনি বললেন হ্যাঁ ঠিক। তবে প্রত্যেক চাবিতেই কিছু দাঁত থাকে এবং দাঁত ব্যতীত কাংখিত দরজাটি খোলা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে কালেমারও সাতটি দাঁত রয়েছে এবং আমাদের জীবনে এর যে কোন একটির অভাব ঈমানের দাবীকে পরিপূর্ণ করে না এবং এর ফলে শাহাদাহ অকার্যকর (বাতিল) হয়ে পড়ে।


প্রথম শর্তঃ ইল্ম বা জ্ঞান


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, فاعلم انه لا اله الا الله-


‘‘তুমি জেনে রাখো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।’’ (মুহাম্মদঃ১৯)


[তাওহীদের] এলেম বা জ্ঞানকে বান্দার ইসলাম কবুলের প্রথম শর্ত নিধারণ করা হয়েছে।


কালেমার শব্দসমূহের জ্ঞান অর্জনঃ কালেমা দু’টি অর্থপূর্ণ বাক্যের সমষ্ঠি- আল্লাহ্ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ (রব) নেই। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্ প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কালেমার প্রথম অংশকে ‘‘তাওহীদ’’ ও দ্বিতীয় অংশকে ‘‘রিসালাত’’ বলা হয় উভয় অংশে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।


তাওহীদের নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ জানতে ও মানতে হবে


(১) আল্লাহ্ই একমাত্র রব। তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র অনন্তকাল থাকবেন। তিনি একমাত্র অদৃশ্য ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন (আলেমুল গায়েব)। তিনিই একমাত্র রিযিকদাতা ও নিরাপত্তাদানকারী�� � তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক। তিনিই মাতৃগর্ভে শিশুর প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত। তিনিই জানেন কখন বৃষ্টি হবে। তিনিই জানেন মানুষ আগামীকাল কি উপার্জন করবে। তিনিই সবার মৃত্যুর সময় ও স্থান নির্ধারণকারী। আল্লাহ্র এই গুণাগুণসমূহ সামগ্রিকভাবে ‘তাওহীদ আল-রুবুবিয়াহ্র’ অন্তর্গত।


যদি কেউ এই ধারনা পোষণ করে যে আমেরিকা বা জাতিসংঘ (ইউ, এন) তার নিরাপত্তা বিধান করবে অথবা তার ব্যবসা বা তার মনিব বা সরকার তাকে রিযিক দিবে, জ্যোতিষ বা ভাগ্যগণনাকারী তার ভবিষ্যত বলে দিবে; তাহলে সে ‘‘তাওহীদ আল-রুবুবিয়াহ্কে’ অস্বীকার করল।


(২) একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা (হুকুমের অনুসরণ) যাবে না। সকল ইবাদত (যেমন- নামায, রোযা, কোরবানী বা ত্যাগ) কেবলমাত্র আল্লাহ্রই প্রাপ্য।


যদি কেউ কোন পূর্ণ্যবান মৃত ব্যক্তি বা কবরের (মাজার) কাছে অথবা কোন ধর্মীয় নেতার (পীর, ফকির) কাছে তার মনের আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রার্থনা করে এবং তাদের নিকট সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান করে তবে সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অস্বীকার করলো। যা একটি প্রকাশ্য কুফুরী এবং ‘তাওহীদ আল উলুহিয়ার’ পরিপন্থী।


(৩) আমরা জানি যে, আল্লাহ্র নিরানববইটি সুন্দর নাম রয়েছে যার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে আল্লাহ্্র গুণ-সমূহকে প্রকাশ করে। এই গুণবাচক নামসমূহের প্রত্যেকটির উপর ঈমান আনা ফরয। এই নামসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনই ‘তাওহীদ আল-আসমাআল সিফাত’।


(৪) আল্লাহই একমাত্র আইনদাতা এবং এই বিশ্বজগতে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ আইন প্রণয়ণের অধিকার রাখে না। অন্য কথায়, ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী একমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হতে হবে। যদি আমরা মনে করি যে, আল্লাহ্র আইন (শরীয়াহ) যা রাসূল (সাঃ) ও খিলাফায়ে রাশেদার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সেকেলে, অপ্রয়োজনীয়, নিকৃষ্ট এবং আল্লাহ্র আইনের (শরীয়াহ) তুলনায় ব্রিটিশ বা আমেরিকান আইন বা অন্য যে কোন মতাদর্শ বা জীবনব্যবস্থা (যেমন-গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, পুঁজিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষবাদ ইত্যাদি) এগুলির যে কোনটি যদি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় তাহলে এই ধারণা পোষণকারী ব্যক্তির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ঘোষণা কার্যকর হবে না। এই ধারণাই কুফরী এবং ‘তাওহীদ আল হাকিমিয়াহর’’ প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন।


প্রত্যেককেই রিসালাত সংক্রান্ত নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ মানতে হবেঃ


(১) আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ্ পাক প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং তাঁর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন নাযিল করা হয়েছে। 


(২) সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূল (সাঃ) এর প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলে যা আল্লাহ্ রাববুল আলামিন কর্তৃক অনুমোদিত।


‘‘সে [মুহাম্মদ (সাঃ)] মনের ইচ্ছায় বলে না। কোরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।’’ (আন-নাজ্মঃ ৩-৪)


সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। 


(৩) আমাদেরকে এই বিষয়টি মানতে হবে যে, আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বিশ্বজগতের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলী সম্পন্ন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।


(৪) আমাদেরকে অবশ্যই রাসূল (সাঃ)-কে সবকিছু (ব্যক্তি ও বস্ত্ত) অপেক্ষা বেশি ভালবাসতে হবে। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন,-তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান এবং সমগ্র মানবকুল অপেক্ষা আমাকে বেশী ভাল না বাসবে। [সহীহ্ আল বুখারী/সহীহ্ মুসলিম]


দ্বিতীয় শর্তঃ (আল-ইয়াক্বীন) নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস স্থাপন


আমাদেরকে অবশ্যই শাহাদার প্রথম শর্তের [তাওহীদ ও রিসালাত] উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ্র অস্তিত্ব, আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ), ফেরেস্তা, আসমানী কিতাবসমূহ, বিচার দিবস, তাক্দীর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির ব্যাপারেও কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়া’লা ও রাসূল (সাঃ)-এর বক্তব্যের বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে না।


‘যে আল্লাহ্ ফেরেশ্তা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করে সে মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ ( নিসাঃ ১৩৬)


আমাদেরকে আবু বকর (রাঃ)-এর ন্যায় ঈমান আনতে হবে যেরূপ তিনি ‘ইস্রা’ ও ‘মিরাজের’ ব্যাপারে ঈমান এনেছিলেন। একদা আবু জেহেল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে কেউ যদি তোমাকে এরূপ বলে যে, সে একরাতে মাসজিদুল আকসা, সাত আসমান, বেহেস্ত, দোযখ পরিভ্রমণ শেষে আবার ঐ রাতেই মক্কায় ফিরে এসেছে তবে তুমি কি তার কথা বিশ্বাস করবে? আবু বকর (রাঃ) জবাব দিলেন অবশ্যই নয়। তখন আবু জেহেল বলল যদি তোমার বন্ধু মুহাম্মদ (সাঃ) এইরূপ কথা বলে? এর জবাবে আবু বকর (রাঃ) বললেন যদি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) এইরূপ কথা বলে থাকেন তবে ইহা অবশ্যই সত্য এবং নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি। এই ঘটনার পর আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) তাকে আল-সিদ্দিক (বিশ্বাসী) উপাধিতে ভুষিত করেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন সন্দেহের বেড়াজাল থেকে মুক্ত এবং এভাবেই আমাদের দ্বিতীয় শর্ত পূরণ করতে হলে এরূপ বিশ্বাসী হতে হবে।


‘‘প্রকৃতপক্ষে মু’মিন তো তারাই যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, অতঃপর কোন সন্দেহ করে না এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করে। শুধুমাত্র তারাই (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী।’’ ( আল-হুজরাতঃ ১৫)


তৃতীয় শর্তঃ (আল-কবুল) প্রকাশ্যে এবং গোপনে ঈমানের স্বীকৃতি


আমাদের অবশ্যই তাওহীদ ও রিসালাতের (শর্ত ০১) ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং যে কোন প্রেক্ষাপটের মোকাবেলায় মৌখিক স্বীকৃতি দান ও বাহ্যিকভাবে মেনে নিতে হবে। কেবলমাত্র অন্তরে বিশ্বাস স্থাপনই যে যথেষ্ট নয় এবং মৌখিক ও বাহ্যিক স্বীকৃতিও প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক তা আবু তালেবের জীবনী থেকে জানা যায়। যিনি (আবু তালেব) অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও রাসূল (সাঃ) কে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারেও বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায় কোরাইশ নেতাদের সম্মুখে ‘কালেমা শাহাদার’ মৌখিক স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ বিচারের দিনে তাকে (আবু তালেব) জাহান্নামের উত্তপ্ত জুতা পরানো হবে।


আল-কবুল বা গ্রহণ হচ্ছে প্রত্যাখ্যানের বিপরীত এবং কুরআনে গ্রহণের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্র (তায়ালা) এই কথাঃ


‘‘সত্যিই তাদেরকে যখন বলা হতঃ ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই।)’’ তখন এরা অহংকারে ফেটে পড়ত। বলতঃ ‘‘আমরা এক বিকৃত মস্তিষ্ক কবির কথায় নিজেদের মাবুদদের ত্যাগ করব।’’ (আস-সাফফাতঃ ৩৫-৩৬) 


চতুর্থ শর্তঃ (আল-ইনকিয়াদ বা আত্মসমর্পণ) কুরআন ও সুন্নাহ্র নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ


আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ্র কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং বাকী আয়াত অমান্য করা যাবে না। অন্যথায় আমাদের ভাগ্যেও তাই ঘটবে যা ইয়াহুদীদের হবে। যারা এরূপ করত এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তাআলা এরশাদ করেন।


‘‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর। যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পেঁŠছে দেয়া হবে।’’(আল বাকারাহ্ঃ ৮৫)


একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার নিজের কামনাবাসনাকে আমার আনীত শিক্ষার দিকে ফিরিয়ে দেয়।’’ [সহীহ আল বুখারী]


কুরআন থেকে আত্মসমর্পণের পক্ষে প্রমাণ এই কথাঃ


‘‘ফিরে এস (অনুতপ্ত হয়ে) তোমাদের রবের দিকে এবং আত্মসমর্পণ কর তার ইচ্ছার কাছে।’’(আয-যুমারঃ ৫৪)


পঞ্চম শর্তঃ সত্যবাদীতা বা আল-সিদ্ক


সেই সত্য যা মিথ্যা বা মুনাফেকী কোনটাই অনুমোদন করে না। এই সত্যের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ


‘‘আলিফ লাম মীম। লোকেরা কি এই মনে করে নিয়েছে যে, ‘‘আমরা ঈমান এনেছি’’ এইটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমরা তো এদের পূর্বে অতিক্রান্ত সকল লোককেই পরীক্ষা করেছি। আল্লাহ্কে তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী।’’ (আন-কাবুতঃ ১,২,৩)


যে ব্যক্তি এ কলেমা শুধু মুখে উচ্চারণ করবে কিন্তু এ কলেমা দ্বারা যা বুঝানো হয় তা যদি অন্তরে অস্বীকার করে তবে সে নাজাত [মুক্তি] লাভ করতে পারবেনা, যেমনটি আল্লাহ্র বর্ণনা অনুযায়ী মুনাফিকরা লাভ করতে পারবেনা। 


‘‘আপনার কাছে মুনাফিকরা যখন আসে তখন বলেঃ আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহ্র রাসূল। আল্লাহ্ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহ্র রাসূল। আর আল্লাহ্ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’’ (মুনাফিকুনঃ ১)


আল্লাহ্ তায়ালা অন্য আয়াতে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে বর্ণনা করেছেনঃ


‘‘আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়।’’ ( আল-বাকারাহ,ঃ ৮)


ষষ্ঠ শর্তঃ আল-ইখলাস বা অন্তরে একাগ্রতা 


নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহ্র জন্য। প্রতি নামাযে আমরা সূরা ফাতিহার এই কথারই স্বীকৃত দেই যে,


‘‘আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।’’ [আল ফাতিহাঃ ০৪]


এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ্র ইবাদতই করি না সাথে সাথে তাঁর উপর পূর্ণ তাওক্কুল (ভরসা) করি। 


নিয়তের বিশুদ্ধতা (ইখলাস আল নিয়্যাহ) ইবাদত কবুলের জন্য অপরিহার্য। একটি হাদীসে আছে যে, ‘‘বিচার দিবসে তিন ব্যক্তিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের একজন হবে আলেম, একজন দানশীল ও একজন শহীদ। তারা জাহান্নামী হবে এই কারণে যে, তাদের কর্মকান্ড আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল না বরং তা ছিল লোক দেখান (রিয়া)।’’ সুতরাং আমাদের ইবাদতসমূহ রিয়ামুক্ত করতে হবে কারণ রিয়াকারীর আমল বরবাদ হয়ে যাবে।


সপ্তম শর্তঃ (আল-মুহাববাত) 


আল্লাহ্র জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহ্র জন্যই ঘৃণা করা। (আল ওয়ালা এবং ওয়াল বারা)ঃ আমাদের যে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে আল্লাহ্র জন্য ভালবাসতে হবে এবং তাঁর জন্যই ঘৃণা করতে হবে। ইব্রাহিম (আঃ)-এর ঘটনা এর (আল ওয়ালা এবং আল বারা) উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি তাঁর পিতা আযরের মিথ্যা প্রভুদের অস্বীকার করে বলেছিলেন ‘‘তোমার ও আমার বিরোধ কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।’’ সুতরাং মু’মিনকে অবশ্যই হক (সত্য) ভালবাসতে হবে এবং বাতিল (মিথ্যা) ঘৃণা করতে হবে।


একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, বিচার দিবসে সাত ব্যক্তি আল্লাহ্র আরশের ছায়া লাভ করবে, যেদিন আল্লাহ্র আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের একজন হল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্র জন্য কারো সঙ্গে মিলিত হত এবং আল্লাহ্র জন্য বিচ্ছিন্ন হত।’’ [সহীহ আল বুখারী]


সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের জীবনী থেকেও হকের প্রতি ভালবাসা এবং বাতিলের প্রতি ঘৃণার ভুরিভুরি উদাহরণ পাওয়া যায়। যুদ্ধের ময়দানে নিঃর্দ্বিধায় কাফের পিতা বা পুত্রকে হত্যা করে অনেক সাহাবী এর যথাযথ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন কারণ তাঁরা কেবলমাত্র আল্লাহ্র জন্যই কাউকে ভালবাসতেন বা ঘৃণা করতেন।


‘‘মানব জাতির মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ্ ছাড়া অপর (শক্তি) কে আল্লাহ্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমতুল্যরূপে গ্রহণ করে এবং তাকে এরূপ ভালবাসে যেরূপ ভালবাসা উচিত একমাত্র আল্লাহ্কে। অথচ প্রকৃত ঈমানদার লোকগণ আল্লাহ্কে সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসে।’’ (আল-বাকারাহঃ ১৬৫)


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘‘আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যারই নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকবে সেই ঈমানের মাধূর্য লাভ করবেঃ (১) তার কাছে আল্লাহ্ ও তার রাসূল অন্য যে কোন কিছুর তুলনায় অধিক প্রিয় হবে। (২) আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ছাড়া কোন উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে ভাল না বাসবে।


(যখন কাউকে ভালবাসবে একমাত্র আল্লাহ্র জন্যই ভালবাসবে) (৩) অবিশ্বাসের (কুফর) দিকে প্রত্যাবর্তনকে ঘৃণা করবে, কেননা আল্লাহ্ তাকে এ থেকে রক্ষা করেছে এবং সে দোজখের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া ঘৃণা করে।’’ [মুসলিম]


মুসলমান হওয়ার জন্য উপরোক্ত সাতটি শর্ত প্রত্যেককে নিজের জীবনে কার্যকর করতে হবে।

No comments:

Post a Comment