Friday, August 12, 2011

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায় ৪

 
জিন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য
জিন আরবী শব্দবাংলাতে জিন শব্দটি ব্যবহৃত হয়কিন্তু ভূত বাংলা শব্দএর আরবী হল ইফরীত, বহুবচনে আফারীতআল কুরআনে সূরা আন-নামলের ৩৯ নং আয়াতে ইফরীত কথাটি এসেছে এভাবে :
قَالَ عِفْريتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آَتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ
এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেবআমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত
এ আয়াতে ইফরীতুম মিনাল জিন  অর্থ্যাৎ জিনদের মধ্যে থেকে এক ইফরীত বা ভূত .. কথাটি এসেছেএমনিভাবে উপরে বর্ণিত হাদীসেও ইফরীতুম মিনাল জিন কথাটি এসেছেতাফসীরবিদগণ বলেছেন, জিনদের মধ্যে যারা অবাধ্য, বেয়ারা, মাস্তান, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে তাদের ইফরীত বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফী গারিবিল কুরআন)
ইফরীত শব্দের অর্থ বাংলাতে ভূত
অতএব দেখা গেল ইফরীত বা ভূত, জিন ছাড়া আর কিছু নয়সব ভূতই জিন তবে সব জিন কিন্তু ভূত নয়

মানসিক রোগী আর জিনে ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য
অনেক সময় আমরা এ সমস্যায় পড়ে যাই। ঠিক করতে পারি না রোগটা কি মানসিক না-কি পাগল, না কি জনিরে আছর থেকে রোগ দেখা দিয়েছে। অনেক সময় তাই আমরা মানসিক-রোগীকে জিনে-ধরা রোগী বলে থাকিতেমনি জিনে-ধরা রোগীকে মানসিক রোগী বলে চালাতে চেষ্টা করিবিশেষ করে ডাক্তার ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কোনভাবেই জিনের আছরকে স্বীকার করতে চান নাতারা এ জাতীয় সকল রোগীকে মানসিক রোগী বলে সনাক্ত করে থাকেন
পাগলামী-কে  আরবীতে বলা হয় জুনুনআর পাগল-কে বলা হয় মাজনূনআরবীতে এ জুনুন ও মাজনূন শব্দ দুটো কিন্তু জিন শব্দ থেকেই এসেছে
যেমন আল কুরআনে এসেছে :
إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ بِهِ جِنَّةٌ فَتَرَبَّصُوا بِهِ حَتَّى حِينٍ
সে কেবল এমন এক লোক, যার মধ্যে পাগলামী রয়েছেঅতএব তোমরা তার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর
এ কথাটি নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের লোকেরা তার সম্পর্কে বলেছিলএ আয়াতে জিন্নাতুন শব্দের অর্থ হল পাগলামী
কাজেই কাউকে পাগলামীর মত অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখলে সেটা যেমন জিনের আছরের কারণে হতে পারে, আবার তা মানসিক রোগের কারণেও হতে পারেতবে এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিষয় নির্ধারণ করেছেন, যার মাধ্যমে মানসিক রোগী আর জিনে-ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য করা যায়
এগুলো হল:
এক. জিনে-ধরা রোগী কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে যায়মানসিক রোগী বেহুশ হয়ে পড়ে না
দুই. কখনো কখনো জিনে-ধরা রোগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয়দাতে খিল লেগে যায়মানসিক রোগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয় না
তিন. জিনে ধরা রোগী প্রায়ই সপ্নে সাপ, কুকুর, বিচ্ছু, বানর, শিয়াল, ইঁদুর ইত্যাদি দেখে থাকেকখনো কখনো সপ্নে দেখে সে অনেক উচু স্থান থেকে পড়ে যাচ্ছে
চার. জিনে ধরা রোগীর সর্বদা ভীতু ভাব থাকেসর্বদা তার ভয় লাগেমানসিক রোগীর তেমন ভয় থাকে না
পাঁচ. জিনে ধরা রোগী নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ইত্যাদি পছন্দ করে নাবরং এগুলো তার অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়
ছয়. জিনে ধরা রোগী কখনো কখনো ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলে
সাত. জিনে ধরা রোগী অধিকাংশ সময় স্বাভাবিক থাকেমাঝে মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করে
আট. জিনে-ধরা রোগী থেকে অনেক সময় আশ্চর্যজনক বিষয় প্রকাশ হয়ে থাকেযেমন অল্প সময়ে সে বহু দূরে চলে যায়গাছে উঠে সরু ডালে বসে থাকে ইত্যাদি
নয়. জিনে ধরা রোগীর কাছে স্বামী, ঘর-সংসার, স্ত্রী-সন্তানদের ভাল লাগে না
দশ. জিনে ধরা রোগীর উপর যখন জিন চড়াও হয় তখন ক্যামেরা দিয়ে তার ছবি তুললে ছবি ধোঁয়ার মত অস্পষ্ট হয়স্পষ্ট হয় নাদেখা গেছে আশে পাশের সকলের ছবি স্পষ্টভাবে উঠেছে কিন্তু রোগীর ছবিটি ধোয়াচ্ছন্নএটা কারো কারো নিজস্ব অভিজ্ঞতামনে রাখতে হবে অভিজ্ঞতা সর্বদা এক রকম ফলাফল নাও দিতে পারে
কিন্তু বড় সমস্যা হবে তখন, যখন রোগীটি নিজেকে জিনে ধরা বলে অভিনয় করে কিন্তু তাকে জিনেও আছর করেনি আর সে মানসিক রোগীও নয়সে তার নিজস্ব একটি লক্ষ্য পূরণের জন্য জিনে ধরার অভিনয় করছে
এ অবস্থায় অভিভাবকের করণীয় হল, তারা তাকে তার দাবী পুরণের আশ্বাস দেবেতাহলে তার জিন ছেড়ে যাবেপরে তার দাবীটি যৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে আর অযৌক্তিক হলে পূরণ করা হবে নাএরপর যদি সে আবার জিনে ধরার অভিনয় করে তাহলে তাকে জিনে ধরা রোগী বলে আর বিশ্বাস করার দরকার নেইঅনেক সময় শারিরিক শাস্তির ভয় দেখালে এ ধরনের বাতিল জিন চলে যায়


No comments:

Post a Comment