Friday, August 12, 2011

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায় ৭

জিনের আছরের চিকিৎসা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নিজে জিনের আছর করা রোগীর চিকিৎসা করেছেনহাদীসে এসেছে -
عن يعلى ابن مرة  قال: رأيت من النبي صلى الله عليه وسلم عجبا خرجت معه في سفر فنزلنا منزلا فأتته امرأة بصبي لها به لمم ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أخرج عدو الله أنا رسول الله ، قال : فبرأ فلما رجعنا جاءت أم الغلام بكبشين وشيء من أقط وسمن ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : يا يعلى ! خذ أحد الكبشين ، ورد عليها الآخر ، وخذ السمن والأقط ، قال : ففعلت

ইয়ালা ইবনে মুররা বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক বার আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে এক সফরে গেলাম তখন আমরা এক স্থানে অবস্থান করলাম তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখলামএক মহিলা নিজের একটি বাচ্চা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলবাচ্চাটি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলোরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, হে আল্লাহর দুশমন বের হয়ে যা! আমি আল্লাহর রাসূল তিনি বলেন, এ কথা বলার পর বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে গেল  যখন আমরা সে স্থান থেকে ফিরে আসছিলাম, তখন বাচ্চাটির মা দুটো ভেড়া, কিছু ঘি ও ছানা নিয়ে আসলরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, হে ইয়ালা! ভেড়া দুটোর মধ্যে একটি রেখে দাওঅন্যটি মহিলাটিকে ফেরত দাওআর ঘি ও ছানা রেখে দাও ইয়ালা বলেন, আমি তাই করলাম (বর্ণনায় : বুখারী, দালায়েলুন নবুওয়াহ)
হাদীসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম :
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাটিকে জিন মুক্ত করেছেনআমি আল্লাহর রাসূল এ কথা শুনেই জিন চলে গেছে
(২) বাচ্চাটির মা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হাদীয়া দিলেনকেহ উপকার করলে তাকে হাদীয়া দেয়া যায়এমনিভাবে জিন মুক্ত করার তদবীর করলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়া যায়
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেনহতে পারে মহিলাটি নিজ সামর্থের চেয়ে বেশী দিয়েছেহয়ত এ কারণে তাদের কষ্ট হবে, এ জন্য রাহমাতুললিল আলামীন হাদীয়ার কিছু অংশ ফেরত দিলেন

জিনের রোগীর কাছে কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত তেলাওয়াত করা :
আল কুরআন পুরোটাই শিফা বা আরোগ্য লাভের মাধ্যমআল কুরআনের বহু স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন-কে শিফা বলেছেনআল কুরআন শারিরিক ব্যধির চিকিৎসা নয়, বরং আধ্যাত্নিক ব্যধির চিকিৎসা এ ধরনের খন্ডিত ব্যাখ্যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়কারণ, আল-কুরআনকে আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে শিফা বলেছেনতিনি বা তাঁর রাসূল কখনো বলেননি যে, শিফা বা আরোগ্য বলতে আধ্যাত্নিক রোগের শিফা বুঝানো হয়েছেতাই যারা বলবেন, আল কুরআনকে শারিরিক ব্যধির জন্য শিফা বলা যাবে না তারা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননিযাই হোক জিনে ধরা রোগীর কাছে আল কুরআনের বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় আর রোগী ভাল হয়ে যায়এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. কর্তৃক আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে তেত্রিশটি আয়াতের কথা বর্ণিত আছেযদিও হাদীসের সনদটি সহীহ নয় কিন্তু আল কুরআনের আয়াতের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেইআমি নিজেও একাধিকবার দেখেছি সুন্নাতের পাবন্দ একজন আলেমের কাছে জিনে ধরা রোগী নিয়ে আসা হলতিনি তেত্রিশটি আয়াত পাঠ করে তাকে শুনালে জিন চলে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়এ রকম দৃশ্য বহুবার প্রত্যক্ষ করেছিকুরআনের বরকত ও প্রভাব কত যে ব্যাপক তা কি আমরা সকলে অনুধাবন করতে পারি?
আর সে তেত্রিশটি আয়াত হল : সূরা ফাতেহা পর, সূরা আল বাকারার ১ থেকে ৪ আয়াত, সূরা আল বাকারার ২৫৫ থেকে ২৫৭ আয়াত, যার মধ্যে আয়াতুল কুরসী রয়েছেসূরা আল বাকারার ২৮৪ থেকে ২৮৬ আয়াতসূরা আল আরাফের ৫৪ থেকে ৫৬ আয়াতসূরা আল ইসরার (বনী ইসরাইল) ১১০ থেকে ১১১ আয়াতসূরা আস সাফফাতের ১ আয়াত থেকে ১১ নং আয়াতসূরা আর রাহমানের ৩৩ আয়াত থেকে ৩৫ নং আয়াতসূরা জিন এর ১ নং আয়াত থেকে ৪ নং আয়াতএভাবে তেত্রিশটি আয়াত হয়
কোন কোন বর্ণনায় এর সাথে সূরা হাশরের ২১ নং আয়াত থেকে ২৪ নং আয়াত পাঠ করার কথা এসেছেআবার সূরা ইখলাছ, সূরা কাফেরূন, সূরা আল ফালাক ও সূরা আন নাছ পাঠ করার কথাও এসেছে
তবে মূল কথা হল তেত্রিশ আয়াত পাঠ করতে হবে এমন কোন বিধান নেইআগেই বলেছি এ সংক্রান্ত হাদীসটির সনদ সহীহ বলে প্রমাণিত নয়বরং এ আয়াতগুলো ও এর সাথে অন্যান্য যে সকল আয়াতের কথা আলোচনা হয়েছে এগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে খূবই অর্থবহ, তৎপর্যপূর্ণ, বরকতময়আর অভিজ্ঞতায় এর কার্যকারিতা প্রমাণিত
যেমন সূরা ফাতেহার কথা সকলে কাছে সুবিদিত যে তার এক নাম হল সূরা শিফাআয়াতুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কে সকলের জানাসূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহের ফজিলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছেসূরা সাফফাত পাঠে জিন শয়তান ভয় পেয়ে যায় বলে হাদীসে এসেছেসূরা ফালাক ও সূরা নাছ সকল প্রকার যাদু টোনা ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ইত্যাদি
তাই জিনে ধরা রোগীর কাছে এ সকল আয়াত তেলাওয়াত করা হলে জিন ছেড়ে যায় ও রোগী সুস্থ হয় বলে অভিজ্ঞতায় প্রমাণিতএবং এটি মহান আল্লাহর কালামের একটি বরকত ও শিফা
জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসার জন্য তাবীজ-কবচ ব্যবহার, লোহা পড়া, ঘর বন্ধক দেয়া ইত্যাদি তদবীর করা ঠিক নয়তবে কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত দুআ-জিকির দিয়ে ঝাড়-ফুঁক, তেল পড়া, পানি পড়া ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি আছে

No comments:

Post a Comment