''আমার
প্রভু!
আমার
বুক আমার জন্য প্রসারিত করো,''
[সুরা
তআ'হা
২০.২৫]
কুরআন
আল্লাহর প্রত্যক্ষ বানী আর
হাদিস আল্লাহর পরোক্ষ বানী।
কুরআন ও সাহিহ হাদিসের একটি
কথাও অস্বীকার করার আগে অবশ্যই
ভেবে দেখবেন,
কারন
অস্বীকার করলে আপনি কাফির
হয়ে যাবেন।
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে
বলেছেনঃ
লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ
ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।’’
[সুরা
মুহাম্মদ ৪৭.১৯]
আল্লাহ,
তিনি
ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই,
তিনি
চিরজীবন্ত,
সদা-বিদ্যমান,
তন্দ্রা
তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না,
নিদ্রাও
নয়;
সব
তার-ই;
যা-কিছু
আছে মহাকাশমন্ডলে এবং যা-কিছু
পৃথিবীতে;
কে
আছে যে তাঁর দরবারে সুপারিশ
করতে পারে তার অনুমতি ছাড়া?
তিনি
জানেন কি আছে তাদের সামনে এবং
কি আছে তাদের পেছনে;
আর
তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা ধারণা
করতে পারে না তিনি যা ইচ্ছা
করেন তা ব্যতীত;
তাঁর
মহাসিংহাসন মহাকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীতে ব্যাপ্ত;
এদের
উভয়ের হেফাজত তাঁকে ক্লান্ত
করে না,
আর
তিনি সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত,
মহামহিম।
[সুরা
বাকরা,
২.২৫৫]
আকাশ,
পৃথিবী
ও এদু’য়ের মধ্যবর্তী বিষয়গুলিকে
আমরা ছেলেখেলার জন্য সৃষ্টি
করিনি। যদি খেলনা তৈরি করাই
আমাদের উদ্দেশ্য হতো,
তাহলে
(অন্যবিধ
উপায়ে)
খেলার
সরঞ্জাম তৈরি করতাম।
[সুরা
আল-আম্বিয়া,
২১.১৬-১৭]
আমি
পঁচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুষ্ক
ঠনঠনে মাটি দ্বারা মানবকে
সৃষ্টি করেছি। এবং জ্বীনকে
এর আগে লূ-এর
আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।
[সুরা
আল-হিজর,
১৫.২৬-২৭]
এ
মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে
সৃজন করেছি,
এতেই
তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং
পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে
উত্থিত করবো। [সুরা
তআ'হা
২০.৫৫]
আল্লাহর
ওয়াদা সত্য,
তিনিই
সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার
পূনর্বার সৃষ্টি করবেন তোমাদের
বদলা দেবার জন্য...
[সুরা
ইউনুস,
১০.৪]
আমি
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল আর
এর মধ্যবর্তী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে
সৃষ্টি করিনি;
আমি
এগুলো যথাযথ
উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি;
কিন্তু
তাদের অধিকাংশই বোঝেনা।
[সুরা
আদ-দুখান,
৪৪.৩৮-৩৯]
এবং
আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন
তোমাদের,
যা
আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে
ভূমন্ডলে;
তাঁর
পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল
সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী
রয়েছে। [Al-Jaathiya:
৪৫.১৩]
আমি
মানুষ ও জিন জাতিকে শুধুই আমার
ইবাদাতের জন্যে সৃস্টি করেছি।”
[সুরা
আয-যারিয়াত
৫১.৫৬]
নিঃসন্দেহে
আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য
দ্বীন (জীবনব্যাবস্থা)
একমাত্র
ইসলাম। [সুরা
আল-ইমরান
৩.১৯]
তোমাদের
জন্য তোমাদের দ্বিনকে পরিপুর্ন
করে দিলাম। [সুরা
মায়িদা ৫.৩]
সবাই
তার (আল্লাহর)
অভিমুখী
হও এবং (আল্লাহকে)
ভয়
করো,
সলাত
কায়িম
করো এবং মুশরিকদের (অর্থাৎ
যারা এক আল্লাহর সাথে কাউকে
শরিক করে তাদের)
অন্তর্ভুক্ত
হয়ো না। [সুরা
আর-রুম
৩০.৩১]
...যে
পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন,
তা-ই
হল সরল পথ। [সুরা
বাকরা,
২.১২০]
অধিকাংশ
মানুশ আল্লাহর প্রতি ইমান
আনা সত্তেও মুশরিক। [সুরা
ইউসুফ ১২.১০৬]
হে
মুমিনগন!
তোমরা
পরিপূর্ণভাবে ইসলামের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং
শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো
না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু। [সুরা
বাক্বরা ২.২০৮]
হে
মানব মন্ডলী,
পৃথিবীর
হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী
ভক্ষন করো। আর শয়তানের পদাংক
অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
[সুরা
বাক্বরা ২.১৬৮]
আর
তোমরা সবাই আল্লাহর রশি
দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো,
আর
বিচ্ছিন্ন হয়ো না। [সুরা
আল-ইমরান
৩.১০৩]
(আল্লাহ)
একদলকে
পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের
জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত
হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে
শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে
গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে
যে,
তারা
সৎপথে রয়েছে। [সুরা
আল-আরফ
৭.৩০]
আল্লাহ
তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত
বাক্য দ্বারা মজবুত করেন;
পার্থিবজীবনে
এবং পরকালে;
এবং
আল্লাহ জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট
করেন;
আল্লাহ
যা ইচ্ছা,
তা
করেন। [সুরা
ইবরহিম ১৪.২৭]
আর
আল্লাহ জালিমদের পথ দেখান
না। [সুরা
আত-তাওবা
৯.১০৯]
যারা
তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি
করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত
হয়ে পড়েছে,
(তাদের)
প্রত্যেক
দলই নিজ নিজ মতবাদ (সঠিক
মনে করে নিজের মতবাদ)
নিয়ে
উল্লসিত। [সুরা
আর-রুম
৩০.৩২]
নিশ্চয়
যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড
করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে,
তাদের
সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।
তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার
নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি
বলে দেবেন যা কিছু তারা করে
থাকে। [সুরা
আল আন-আম
৬.১৫৯]
হে
ঈমানদারগণ!
আল্লাহর
নির্দেশ মান্য কর,
নির্দেশ
মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের
মধ্যে যারা বিচারক তাদের।
তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে
বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়,
তাহলে
তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি
প্রত্যর্পণ কর-যদি
তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের
উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই
কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক
দিয়ে উত্তম। [সুরা
আন-নিসা
৪.৫৯]
অতএব,
(হে
নাবি!)
আপনার
রবের কসম,
ঐ
ব্যাক্তি ঈমানদার হতেই পারে
না,
যতক্ষণ
না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের
ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক
বলে মনে করে। অতঃপর আপনার
মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে
কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না
এবং তা খুশিমনে কবুল করে নেবে।
[সুরা
আন-নিসা
৪.৬৫]
…
কে
বেশি অন্যায়কারী তার চাইতে
যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা
রচনা করে,
যেন
সে লোককে বিভ্রান্ত করতে
পারে জ্ঞানহীনভাবে?
নিঃসন্দেহ
আল্লাহ ধর্মপথে পরিচালিত
করেন না অন্যায়কারী লোকদের।
[সুরা
আল আন-আম
৬.১৪৪]
তোমরা
কি কিতাবের কিছু অংশ মানো আর
কিছু অংশ মানো না?
যারা
এটা করে,
পার্থিব
জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর
কোন পথ নেই। কিয়ামতের দিন
তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে
পৌছে দেয়া হবে।’’ [সুরা
আল-বাক্বরা
২.৮৫]
কুরআনুল কারিমের উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদেরকে কেনো সৃষ্টি করেছেন তার উত্তর পাওয়া যায়। তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুই তার ইবাদাত করার জন্যে। কিন্তু ইবাদাত করতে হবে কিভাবে? কি অনুসারে? ইবাদাত করতে তো নির্দেশনা, বিধিনিষেধ, সীমারেখা, বৈধতা-অবৈধতা ইত্যাদির অর্থাৎ একটা জীবনব্যাবস্থার প্রয়োজন হয়। গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র এগুলো তো জীবনব্যাবস্থা। এগুলোর কোনটা মানবো? কোনটার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের ইবাদাত গ্রহন করবেন? আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা সে উত্তর দিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্যে জীবনব্যাবস্থা নির্ধারন করে দিয়েছেন, আর তা হলো একমাত্র ইসলাম; অন্য কোনো জীবনব্যাবস্থা মুসলিমের জন্যে গ্রহনযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ''আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। [সুরা আল আন-আম ৬.১১৬]''। অথচ গনতন্ত্রে তো এটাই মুলনিতি। আল্লাহ আরো বলেছেন, ''যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য করো, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [সুরা আল মুমিনুন ২৩.৩৪]''। গনতন্ত্রে বিধান দেওয়ার মালিক জনগন। অথচ দ্বীন-আল-ইসলামে ''বিধান দেওয়ার মালিক আল্লাহ। [সুরা ক্বসাস ২৮.৭০]''। গনতন্ত্রে ক্ষমতার মালিক জনগন। অথচ দ্বীন-আল-ইসলামে ''সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর। [সুরা ইউনুস ১০.৬৫]''। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, জীবনব্যাবস্থা হিসেবে তো একমাত্র ইসলামকে নির্ধারন করে দেওয়া হলো; কিন্তু যদি এতে সবকিছু না থাকে! মানে, যদি আরও কিছুর প্রয়োজন হয়?
এ
ব্যাপারে আল্লাহ বলে দিয়েছেন,
তিনি
ইসলামকে পরিপুর্ন করে দিয়েছেন;
এই
জীবনব্যাবস্থায় আর কিছুর
প্রয়োজন নেই।
ইসলামই
হলো একমাত্র জীবনব্যাবস্থা
যেখানে অন্যায়ের শুধু শাস্তিই
নির্ধারন করা হয়নি,
বরং
তার স্থায়ি প্রতিকারের ও
নির্মুলের ব্যাবস্থা রয়েছে।
তাই যৌক্তিক ভাবেও একজন
বোধসম্পন্ন মানুষ অন্য কোনো
জীবনব্যাবস্থা মানতে পারে
না। আর অপনি যদি ভালোভাবে ভেবে
দেখেন,
তাহলে
বুঝবেন,
দ্বীন-আল-ইসলামের
প্রতিটি নির্দেশনা একটির
সাথে অপরটি সম্পর্কযুক্ত।
একজন মানুষ এর যে কোনো একটিকে
যদি বাদ দেয় অথবা পরিবর্তন
করে তাহলে পুরো ব্যাবস্থাটিই
তার কাছে অসামঞ্জস্য হয়ে পড়ে।
ইসলাম
নিছক কোনো ধর্মের নাম নয়। এটা
একটা পুর্নাংগ জীবনব্যাবস্থা।
রাস্ট্রনিতি,
সমাজনিতি,
পারিবারিক
জীবন থেকে শুরু করে খাদ্য,
ড্রেসকোড
ইত্যাদি সবকিছুরই নির্দেশনা,
বিধি-নিষেধ,
সীমারেখা
উল্লেখিত আছে। এই জীবনব্যাবস্থায়
রাস্ট্রব্যাবস্থার নাম
খিলাফাত। এ ব্যাবস্থায় শীর্ষ
ব্যাক্তিটি হচ্ছেন খলিফা।
সারা বিশ্বে মুসলিমদের ইমাম
অর্থাৎ নেতা তিনিই। তিনি
নির্বাচিত হবেন সারা বিশ্বের
আলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে।
ইসলামে মানুষ হিসেবে প্রতিটি
মুসলিমের গুরুত্ব একই কিন্তু
ইলমের ভিত্তিতে সবাই সমান
নয়। এটা গনতন্ত্রের মতো নয়,
যে,
একজন
সুদখোর,
ঘুষখোর,
চোর,
ডাকাত
কিংবা সন্ত্রাসীর ভোটের মুল্য
সমান হবে একজন ইমানদার ডাক্তারের,
আমানাত
রক্ষাকারির,
আলিমের
কিংবা মুজাহিদের। সারা বিশ্বের
খ্রীস্টানরা একজন পোপকে মেনে
চলে,
শিয়া
ধর্মের মানুষরা একজন ইমামকে
মেনে চলে। কিন্তু মুসলিমদের
কোনো একক ইমাম বা খলিফা নেই।
আল্লাহ
কোনো দেশ ভাগ করেন নি কিংবা
করতেও বলেন নি। আঞ্চলের একটি
নাম দেওয়া আর দেশে বিভক্ত হওয়া
এক জিনিস নয়। তবে একটি বৃহৎ
অঞ্চলকে দেশ বলতে আমাদের কোনো
আপত্তি নেই,
যদি
সেখানে সংবিধান হিসেবে কুরআনকে
মানা হয়,
অর্থাৎ
আল্লহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত
থাকে। কাউকে ''ইরাকে
বসবাসকারী মুসলিম''
বলতে
আমাদের আপত্তি নেই,
কিন্তু
''ইরাকী
মুসলিম''
বলতে
আমাদের আপত্তি আছে। আমাদেরকে
শিখানো হয়,
ধর্ম
যার যার,
দেশ
সবার (এক)।
কিন্তু ইসলামের কথা হচ্ছে,
দেশ
যার যার,
ধর্ম
সবার (এক;
ইসলাম)।
ঠিক
আছে,
কোনো
ব্যাক্তি আল্লাহকে স্রষ্টা
ও ইবাদাতের যোগ্য হিসেবে
একমাত্র উপাস্য বলে মানলো,
তাকে
যেভাবে ভয় করা উচিত সেভাবেই
ভয় করলো,
তার
ইবাদাত করতে রাজি হলো,
জীবনব্যাবস্থা
হিসেবে ইসলামকে মেনে নিলো।
কিন্তু তার ভাবনা হলো,
আল্লাহ
এ বিশাল মহাবিশ্বকে একা
নিয়ন্ত্রন করেন কিভাবে?
তা
কি করে সম্ভব?
নিশ্চয়
এ কাজে তার কোনো সাহায্যকারি
আছে। আবার সে চিন্তা করে,
তার
সাহায্যকারি যদি না-ই
থাকে তাহলে তিনি কতো পরাক্রমশালি!
তিনি
যখন এতো-ই
মহান,
তাহলে
নিশ্চয় আমার মতো এতো ক্ষুদ্র
এক জীবের কথা তার কাছে সরাসরি
পৌছানো সম্ভব নয়,
নিশ্চয়
কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন।
ওই
ব্যাক্তি শিরক করলো। কারন,
প্রথমত,
লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহর
হুকুম পালনকারী আছেন কিন্তু
ইলাহ হিসেবে তার কোনো সহকারী
নেই। এটা বিশ্বাস করা ইমানের
প্রধান মৌলিক বিষয়। কিন্তু
ওই ব্যাক্তি ইলাহ হিসেবে আরো
কাউকে শরীক করছে। দ্বিতীয়ত,
সে
আল্লাহকে পরাক্রমশালি ভাবছে
ঠিকই কিন্তু যেভাবে আল্লাহ
বলেছেন সেভাবে নয়। আল্লাহ
বলেছেন যে,
তিনি
বান্দার কথা সরাসরি শুনতে
পান,
কোনো
মাধ্যম লাগে না। এভাবে ওই
ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে
মধ্যস্থতাকারি যোগ করলো। আর
এভাবেই অথবা এরকমই কোনো ভাবে
অধিকাংশ মানুশ শিরক করে থাকে।
অথচ,
আল্লাহ
বলেছেন,
''আল্লাহ
কেবল শিরকের গুনাহই মাফ করেন
না;
উহা
ব্যতিত আর যত গুনাহ আছে তা যার
জন্য ইচ্ছা মাফ করে দেন। [সুরা
আন-নিসা
৪.৪৮]''।
''বস্তুত,
যে
আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও যে
শরীক করেছে আল্লাহ তার ওপর
জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।
[সুরা
আল-মায়িদাহ
৫.৭২]''।
আমাদের প্রকাশ্য শত্রু হচ্ছে
শাইতন। কিন্তু শাইতন যদি
আপনাকে বলে,
''চলুন,
জাহান্নামে
যাই।''
আপনি
যাবেন?
সুতরাং
শাইতন প্রথমত যা চায়,
তা
হলো মানুশ আল্লাহর ইবাদাত
করুক কিন্তু তাতে যেন শিরক
থাকে;
তাহলে
মানুষ যে ইবাদাতই করুক না কেনো
তা কখনো-ই
আল্লাহ গ্রহন করবেন না। শাইতন
মানুষের মনে কুমন্ত্রনা দেয়
এই বলে,
তুমি
সলাত করো,
সিয়াম
করো,
যাকাত
দাও,
হাজ্জ
করো,
দেখবা
মানুষ তোমাকে অনেক ভালো বলবে।
মানুষটি হয়তো ভাববে,
হুমম,
আসলেই
তো। কিংবা সে মানুষকে বলে,
কাফির-মুশরিকরাও
তো মানুষ। সুতরাং কেউ আল্লাহর
আইন না মানলে তুমি তার প্রতি
কঠোর হয়ো না;
এরকম
করলে মানুষ তো তোমাকে খারাপ
বলবে। মানুষটি হয়তো ভাববে,
হুমম,
আসলেই
তো। কিন্তু সেই মানুষটি এটা
ভেবেছে কি?
যে,
সে
শিরক করতে যাচ্ছে। কারন,
সলাত,
সাওম,
হাজ্জ,
যাকাত-
এগুলোর
হুকুম তো আল্লাহর;
মানুষের
না। সুতরাং মানুষের সন্তুষ্টি
তো উদ্দেশ্য নয়;
উদ্দেশ্য
তো আল্লাহকে সন্তুস্ট করা।
আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করাই
তো শিরক। হ্যা,
এগুলো
করলে যদি মানুষ সন্তুষ্ট হয়
তো ভালো কথা। একইভাবে আল্লহর
হকুম প্রতিষ্ঠা করতে গেলে
যদি অন্য কেউ আমার প্রতি
অসন্তুষ্ট হয়,
তাহলে
আমার কিছু আসে-যায়
না। আল্লাহর অসন্তুষ্টির
চেয়ে যদি অন্য কারো অসন্তুষ্টির
বেশি মুল্য দিই,
তাও
হবে শিরক। শাইতন মানুষকে বলে,
তুমি
অসংখ্য গুনাহ করার কারনে
আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করতে
চান না;
তুমি
পীর ধরো,
আলিম
ধরো,
মাজারে
যাও তাদের কাছে অনুনয় বিনয়
করো,
তারা
তোমার হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা
চাইবেন,
তাহলে
তুমি ক্ষমা পাবা। অথচ আল্লাহ
বলেন,
আল্লাহকে
বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক,
তারা
সবাই তোমাদের মতই বান্দা।
[সুরা
আল-আরাফ
৭.১৯৪]।
যেই
নাবি(সঃ)কে
আল্লাহ এতো ভালোবাসতেন যে,
নাবি
(সঃ)
রোদে
চলে গেলে আল্লাহ মেঘকেও সরিয়ে
দিয়েছেন ছায়া দেওয়ার জন্যে
অথচ সেই নাবিকে পর্যন্ত আল্লাহ
শিরক সম্পর্কে বলেছেন,
''(হে
মুহাম্মাদ সঃ)
আপনার
আগে যারা ছিলেন তাঁদের কাছে
নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে প্রত্যাদিষ্ট
হয়েছে এবং এখন আপনার কাছেও
প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে যে,
আপনিও
যদি শিরক করেন তাহলে আপনার
সমস্ত ইবাদাত নিশ্চয়ই নিষ্ফল
হয়ে যাবে এবং নিশ্চয়ই আপনি
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাবেন।''
[সুরা
আজ-ঝুমার
৩৯.৬৫]
দ্বীন-আল-ইসলামের
সবচেয়ে যারা উপকার করেন তারা
হলেন আলিমরা;
আর
দ্বীন-আল-ইসলামের
সবচেয়ে যারা অপকার করেন তারাও
হলেন আলিমরা। সুতরাং আলিমরা
দুই প্রকার-
ভালো
ও মন্দ। অনেকের কাছেই ব্যাপারটি
বিভ্রান্তিজনক হতে পারে;
তবে
তাদের কাছে নয়,
যারা
দ্বীন-আল-ইসলামের
সঠিক জ্ঞান রাখেন। একটা বিষয়ে
সুস্পষ্ট ধারনা থাকা জরুরি,
আর
তা হলো তাওহীদের ঝড় কাদের গায়ে
লাগে আর কেনো লাগে। তারা হলেন
সমাজপতি ও ধর্মপতি;
এই
দুই শ্রেনীর মানুষের সাথেই
''লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ''র
যত বিরোধ। এরা পরষ্পরের সহযোগী।
এদের মধ্য থেকে যারা ''লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ''র
কাছে আত্নসমর্পন করে কেবল
তারা-ই
সঠিক পথ-প্রাপ্ত।
প্রকৃত আলিমদের মতভেদ কোনোদিন
ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করে না;
কারন
তারা সত্যটাকে গ্রহন করার
জন্যেই ইলম চর্চা করেন। ভুল
বুঝার সাথে সাথেই সেই ভুল
বর্জন করেন। অপরদিকে যে সব
আলিমরা সত্য জানারও চেস্টা
করেন না আবার সত্য জানানো হলেও
তারা গ্রহন করেন না,
তাদের
দ্বারাই ইসলামী জীবনব্যাবস্থা
ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাদের দ্বারা
শিরক-বিদায়াত
প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সাধারন
মানুষ অধিকাংশ শিরক-বিদায়াতে
লিপ্ত হয় সমাজের অজুহাত দেখিয়ে,
তাদের
পুর্বপরুষদের অজুহাত দেখিয়ে।
এদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
যখন
তাদেরকে বলা হয় যে,
আল্লাহর
নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের
দিকে এসো,
তখন
তারা বলে,
আমাদের
জন্যে তাই যথেষ্ট,
যার
উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে
পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা
কোন জ্ঞান নাও রাখে এবং হিদায়াত
প্রাপ্ত নাও হয় তবুও কি তারা
তাই করবে?
[সুরা
আল-মায়িদা
৫.১০৪]
আমাদের
করনীয় ও এদের পাওনার ব্যাপারে
আল্লাহ বলেন,
অতএব,
তারা
যেসবের উপাসনা করে তুমি সে
ব্যাপারে কোনরূপ ধোকায়
পড়বে না। তাদের পূর্ববর্তী
বাপ-দাদারা
যেমন উপাসনা করত,
এরাও
তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি
তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু
মাত্রও কম না করে পুরোপুরিই
দান করবো। [সুরা
হুদ ১১.১০৯]
তাহলে,
মাযহাব
কি?
মাযহাব
অর্থ যাওয়ার স্থান বা যাওয়ার
সময়। পরিভাষায়,
কোনো
আদর্শ যা রসুল (সঃ)
এর
সময় ইসলাম যে অবস্থায় ছিলো
সেই সময়কার অবস্থায় ফিরিয়ে
নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে।
সুতরাং মাযহাব শুধু
চারটি নয়;
যারা-ই
এই চেস্টা করেছেন,
তারা-ই
মাযহাব করেছেন। রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর মৃত্যুর পর এবং
তার সাহাবা রদিয়াল্লাহু তাআলা
আনহুমদের যুগের শেষ হলে কিছু
মানুষ প্রকৃত ইলমের অভাবে
শাইতনের প্ররোচনায় ধীরে ধীরে
দ্বীনের মধ্যে বিভ্রান্তি
প্রবেশ করাতে থাকে;
আর
মানুষ পথভ্রষ্ট হতে থাকে।
সুবহানাল্লাহ,
যত
মানুষই পথভ্রষ্ট হোক না কেনো
আল্লাহর রহমাতে কিয়ামাত
পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো না কোনো
অংশে কেউ না কেউ তাওহিদের
পতাকা সঠিকভাবে উড্ডীন রাখবেই
আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তাআলাও কখনো কাফির-মুশরিকদেরকে
এই মানুষগুলোর ওপর নৈতিক বিজয়
দান করবেন না। তারা সর্বদা
স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে
সাহায্যপ্রাপ্ত থাকবে। তাদের
জন্যে আখিরাতেও পুরষ্কার
নির্ধারিত রয়েছে। অবশ্য
আল্লাহই ভালো জানেন,
কে
প্রকৃতপক্ষে তার জন্যে কাজ
করেছে। তারপরও আমরা আমাদের
বিচারে যাদেরকে আল্লাহর পথে
পেয়ে থাকি তাদের মাধ্যমে
মুসলিম জাহান উপকৃত হয়ে থাকে।
এই উপকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন
ভাবে হয়ে থাকে। যেমন,
শাইখ
তায়ামিয়্যাহ,
শাইখ
তামিমি,
ইমাম
আবু হানিফা,
ইমাম
মালিক,
ইমাম
শাফিই,
ইমাম
হাম্বাল,
ইমাম
বুখারী,
ইমাম
মুসলিম,
ইমাম
তিরমিজি,
ইমাম
নাসাই,
ইমাম
নাওয়ায়ি,
শাইখ
নাসিরুদ্দিন আল-আলবানি,
শাইখ
আবদুল্লাহ আযযাম (রঃ),
এমন
হাজার হাজার মানুষ নিজেদের
জীবন অতিবাহিত করেছেন মেধা
দিয়ে,
আমাল
দিয়ে মুসলিম জাহানের উপকার
করে।
কিন্তু
মানুষ একসময় তাদের ব্যাপারে
বাড়াবাড়ি শুরু করে এবং নিজেরা
এক একটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
তাদের পছন্দসই ইমামের নামে
মাজহাব তৈরি করে ফেলে। যদিও
এক্ষেত্রে ওই ইমামদেরকে কোনো
প্রকার দোষ দেওয়া যায় না।
যাদের
নামে মাযহাব তৈরি করা হয়েছে
তাদের জীবনকালঃ
মাযহাব
|
যাদের
নামে তৈরি
|
জন্ম
|
জন্মস্থান
|
মৃত্যু
|
মৃত্যুস্থান
|
হানাফি
|
আবু
হানিফা নু'মান
বিন সাবিত (রঃ)
|
৮০
হিজরি
|
কুফা
|
১৫০
হিজরি
|
বাগদাদ
|
মালিকি
|
আবু
আবদুল্লাহ মালিক বিন আনাস
(রঃ)
|
৯৫
হিজরি
|
মাদিনা
|
১৭৯
হিজরি
|
মাদিনা
|
শাফিই
|
আবু
আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন
ইদ্রিস (রঃ)
|
১৫০
হিজরি
|
ফিলিস্তিন
|
২০৪
হিজরি
|
মিসর
|
হাম্বলি
|
আবু
আবদুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ
হাম্বল (রঃ)
|
১৬৪
হিজরি
|
বাগদাদ
|
২৪১
হিজরি
|
বাগদাদ
|
যাদের
নামে মাযহাব তৈরি করা হয়েছে
তাদের বক্তব্যঃ
ইমাম
আবু হানিফা (রঃ)
বলেছেন,
যদি
সহিহ হাদিস পাওয়া যায়,
সেটাই
(অর্থাৎ
সেই অনুযায়ি আমাল করা-ই)
আমার
মাযহাব। [ইবনুল
আবেদিন ১/৬৩,
রসমুল
মুফতি ১/৪,
ইক্কামুল
মুফতি ৬২ পৃষ্ঠা]
কারো
জন্যে আমাদের কথা মেনে নেওয়া
বৈধ্য নয়,
যতক্ষন
পর্যন্ত সে না জানে আমরা কোথা
থেকে তা গ্রহন করেছি। [হাশিয়া
ইবনুল আবেদিন ২/২৯৩,
রসমুল
মুফতি ২৯,
৩২
পৃষ্ঠা,
শারিন
মিথান ১/৫৫,
ইলামুল
মুওয়াক্কিন ২/৩০৯]
যে
ব্যাক্তি আমার দালিল জানে
না,
তার
জন্যে আমার কথা দিয়ে ফাতাওয়া
দেওয়া হারাম। [আন-নাফিউল
কারিম ১৩৫ পৃষ্ঠা]
আমরা
তো মানুষ,
হতে
পারে,
আমরা
আজ এক কথা বলি আর কাল তা প্রত্যাহার
করে নিই। [আন-নাফিউল
কারিম ১৩৫ পৃষ্ঠা]
যদি
আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর
কিতাব ও রসুল (সঃ)
এর
হাদিসের পরিপন্থি,
তাহলে
আমার কথাকে দেওয়ালে ছুড়ে মারো।
[ইক্কাবুল
হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা]
ইমাম
মালিক (রঃ)
বলেছেন,
আমি
তো একজন মানুষ,
আমার
কথা ভুলও হতে পারে আবার ঠিকও
হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার
মতকে বিবেচনা করে দেখো। তখন
যেটা (আল্লাহর)
কিতাব
ও (রসুলুল্লাহ(সঃ)র)
সুন্নাহর
অনুকুল পাও সেটা গ্রহন করো;
আর
যা (আল্লাহর)
কিতাব
ও (রসুলুল্লাহ
সঃ এর)
সুন্নাহর
প্রতিকুল পাও তা বর্জন করো।
[জানিউ
বায়ানিল ইলম ২/৩২,
উসুলুল
আহকাম ৬/১৪৯]
রসুলুল্লাহ
(সঃ)
এর
পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার
কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে।
[ইবনু
আবদিল হাদি,
খন্ড
১,
পৃষ্ঠা
২২৭;
আল
ফাতাওয়া আস-সাবকি
খন্ড ১,
পৃষ্ঠা
১৪৮;
উসুলুল
আহকাম ইবনু হাযম,
খন্ড
৬,
পৃষ্ঠা
১৪৫-১৭৯]
ইমাম
শাফিই (রঃ)
বলেছেন,
হাদিস
সহিহ হলে সেটাই আমার মাযহাব।
[মাজমু
১/৬৩;
শা'রানি
১/৫৭]
আমি
যে কথাই বলি না কেনো অথবা যে
নিতিই প্রনয়ন করি না কেনো,
তা
যদি আল্লাহর রসুল (সঃ)
থেকে
বর্নিত হাদিসের খিলাফ হয়,
তাহলে
সে কথা-ই
মান্য,
যা
রসুল (সঃ)
বলেছেন;
আর
সেটাই আমার কথা। [তারিখু
দিমাশক;
ইলামুল
মুওয়াক্কিইন ২/৩৬৬,
৩৬৪]
(ইমাম
শাফিই তার ছাত্র ইমাম আহমাদকে
সম্মোধন করে বলেন)
হাদিস
ও রিজাল সম্পর্কে তোমরা আমার
চেয়ে বেশি জানো। অতএব,
হাদিস
সাহিহ পেলে আমাকে জানাও,
তা
যা-ই
হোক না কেনো;
কুকি,
বাসরি
কিংবা শামী। তা সহিহ হলে সেটাই
আমি আমার মাযহাব বানিয়ে নেবো।
[ইবনু
আবি হাতিম পৃষ্ঠা ৯৪-৯৫;
হিলয়াহ
৯/১০৬]
আমার
কিতাবে যদি রসুল (সঃ)
এর
খিলাফ কোনো কথা পাও,
তাহলে
রসুল (সঃ)
এর
কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা
বলেছি তা বর্যন কোরো। [নাওয়াবির
মাজমু ১/৬৩;
ইলামুল
মুওয়াক্কিইন ২/৩৬১]
যে
কথাই আমি বলি না কেনো,
তা
যদি সাহিহ সুন্নাহর পরিপন্থি
হয়,
তাহলে
নাবি (সঃ)
এর
হাদিসই অধিক মান্য। সুতরাং
তখন তোমরা আমার অনুসন্ধান
কোরো না। [হাদিস
ও সুন্নার মুল্যায়ন,
পৃষ্ঠা
৫৪]
রসুল
(সঃ)
থেকে
যে হাদিসই বর্নিত হয়,
সেটাই
আমার কথা;
যদিও
তা আমার নিকট থেকে না শুনে
থাকো। [ইবনু
হাতিম ৯৩-৯৪]
ইমাম
আহমাদ (রঃ)
বলেন,
তোমরা
আমার অনুসন্ধান করো না,
মালিক(রঃ)-এরও
অনুসন্ধান করো না;
অনুসন্ধান
করো না শাফিই (রঃ)
আর
না আওয়ারি (রঃ)
ও
শত্তরিব (রঃ)
এর;
বরং
তোমরা সেখান থেকে তা গ্রহন
করো,
যেখান
থেকে তারা গ্রহন করেছেন।
[ইলামুল
মুওয়াক্কিইন ২/৩০২]
যে
ব্যক্তি আল্লাহর রসুল (সঃ)
এর
হাদিস প্রত্যাখ্যান করে,
সে
ব্যক্তি ধ্বংসন্মুখ। [ইবনুল
জাওজি পৃষ্ঠা ১৮২]
আওজাই
(রঃ),
ইমাম
মালিক (রঃ)
ও
ইমাম আবু হানিফা(রঃ)-এর
রায় তাদের নিজস্ব রায় বা
ইজতিহাদ। [ইবনু
আবদিল বার-আল-জামই,
খন্ড
২,
পৃষ্ঠা
১৪৯]
সুতরাং
বোঝা গেলো ইমামরা দোষী নন।
তাদেরকে নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি
করে তারাই দোষী। তাছাড়া এইসব
আলীমরা কার মাজহাব মেনে চলতেন?
তাদের
নিজেদের,
না
কি রসুলুল্লাহ(সঃ)র?
যদি
বলেন,
রসুলুল্লাহ(সঃ)র
তাহলে তারা চেষ্টা করে গেছেন
একটি মাত্র পথে যাওয়ার জন্যে
তা তাদের কথাতেই প্রমানিতো।
আর তাছাড়া মাজহাব অর্থও তো
তা-ই
নির্দেশ করে। এখন যদি কেউ এই
আলিমদের কথাকে অস্বীকার করে
তাহলে তারা কি এই আলিমদের
পক্ষে না বিপক্ষে?
আর
যদি কেউ মনে করে এই আলিমরা
তাদের নিজেদের তৈরি মাজহাব
অনুসরন করেছেন তাহলে আপনার
মতে তিনি কাফির!
কারন
আল্লাহ বলেছেন,
আর
যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচরণ
করে পথনির্দেশ তার কাছে সুস্পষ্ট
হবার পরে,
আর
অনুসরণ করে মূমিনদের পথ থেকে
ভিন্ন পথ,
আমরা
তাকে ফেরাবো সেই দিকে যে দিকে
সে ফিরেছে (অর্থাৎ
কুফরির দিকে),
আর
তাকে প্রবেশ করাবো জাহান্নামে,
আর
মন্দ সেই গন্তব্যস্থান!
[সুরা
আল-নিসা
৪.১১৪]
ইমাম
হচ্ছেন নেতা। একজন মানুষ যাকেই
ইমাম হিসেবে মানুক না কেনো,
হোক
তিনি ইমাম আবু হানিফা,
ইমাম
শাফিই,
ইমাম
আজ্জাম কিংবা তার এলাকার
মাসজিদের ইমাম;
তার
কথা যদি কুরআন ও সাহিহ সুন্নাহ
অনুসারে হয়,
তাকে
মান্য করতে হবে,
অন্যথায়
নয়। তাদের কেউই নিজেদের নামে
মাজহাব সৃষ্টি করতে বলেননি।
রসুল (সঃ)
এর
আমলে সাহাবি (রাঃ)রা
যে কোনো সমস্যার সমাধান সরাসরি
রসুল (সঃ)
এর
কাছ থেকে পেতেন। সময়ের পরিবর্তনের
সাথে সাথে মানুষ নতুন নতুন
যে সব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে
বিশেষত,
দৈনন্দিন
জীবনের সাথে ব্যবহারিক দিক
থেকে ইসলামের সমন্ময় ঘটাতে
গিয়ে আকিদাগত বিষয়ে সঠিক
জ্ঞানের অভাবে অনেকেই বিপত্তিতে
পড়েন। উদাহরনস্বরুপ,
দক্ষিন
এশিয়ায় কাঠাল উৎপন্ন হয়,
কিন্তু
রসুল (সঃ)
এর
যুগে আরব বিশ্বে তো কাঠাল
জন্মাতো না। সুতরাং রসুল (সঃ)
এ
ব্যাপারে কিছু বলে যাননি।
এখন,
দক্ষিন
এশিয়ার মানুষের জন্যে কাঠাল
খাওয়া জায়িজ কি না তা আমরা
কোথা থেকে জানবো?
এরকম
সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্যে
কোনো কোনো ব্যাক্তি কুরআন ও
হাদিসের বিধি-বিধানগুলো
খুব গভীরভাবে বিবেচনা করেন
এবং সেই অনুযায়ি রায় দেন। এইসব
মহান ব্যাক্তিদের কাউকে নিয়ে
মানুষ কখনো কখনো বাড়াবাড়ি
করেছে। এমনকি তাদের মতবাদের
অনুসারিরা কখনো আলাদা দল
পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছে।
এতটুকু পর্যন্ত মেনে নেওয়া
যায়। কিন্তু যখন দেখা যায়,
একদলের
থেকে আরেক দলের মতবাদ কুরআন-সুন্নাহ
অনুযায়ি অধিক গ্রহনযোগ্য,
তারপরও
সেটা মাযহাবের দোহাই দিয়ে
মেনে নেওয়া হয় না,
তখনই
এটা হয়ে যায় বাড়াবাড়ি। এর চেয়ে
বড়ো কথা,
তারা
তো তাদের মাযহাব থেকেও বিচ্ছিন্ন
হয়ে গেলো;
যদিও
তারা তা মানে না। কারন,
সব
মাযহাবের ইমামরাই নিজেদেরকে
মানুষ বলে মনে করতেন আর স্বীকার
করতেন যে,
তাদের
সিদ্ধান্তে ভুল হতে পারে।
কিন্তু সেই সব মাযহাবের অন্ধ
অনুসারীরা তাদের ইমামদেরকে
মানুষ বলেই মনে করেন না;
কারন
তারা মানেন না যে,
তাদের
ইমামদের ভুল হতে পারে। স্বয়ং
রসুলুল্লাহ (সঃ)
এর
ভুল হতে পারে,
অথচ
এই ইমামদের ভুল হতে পারে না!
তাহলে
কি এরা এই ইমামদেরকে রসুল (সঃ)
এর
চেয়েও বড়ো মনে করে?
আপনি
কুরআন ও সাহিহ হিসেবে প্রমানিত
হাদিসের ভুল ধরবেন কিভাবে?
সব
মাযহাবের ইমামরাই তো তাদের
সিদ্ধান্তের বিপরিতে সাহিহ
হাদিস পেলে তাদের ওই সিদ্ধান্তটি
বর্জন করতে বলেছেন। আর যদি
অন্য মাযহাব থেকে নিজের মাযহাবের
চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো কোনো
সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন,
তাহলে
একবার ভেবে দেখুন তো আসলে কার
সিদ্ধান্ত গ্রহন করছেন?
ইসলামের
না কি ওই মাযহাবের?
আপনার
চিন্তা করার ক্ষমতায় যদি
সমস্যা না থাকে তাহলে অবশ্যই
বলবেন,
ইসলামের;
কারন
ওই মাযহাবও কুরআন-সুন্নাহ
অনুযায়িই সিদ্ধান্তটি গ্রহন
করেছে। তাহলে সেটা গ্রহন করতে
সমস্যা কোথায়?
একটা
লম্বা গল্প হবে এখন।
ধরুন,
একজন
গ্রীষ্মপ্রধান দেশের গবেষক
তার ছাত্রদেরকে বললেন,
আমি
গবেষনা করে এই সিদ্ধান্তে
পৌছেছি,
বাস্প
পানির একটি অবস্থা। তাই আমি
ধারনা করছি,
আমাদের
বায়ুমন্ডলের সমস্ত বায়ু পানি
থেকে তৈরি হয়।
মনে
করুন,
এর
পরে তার মৃত্যু হলো।
অন্যদিকে,
আরেকজন
শীতপ্রধান দেশের গবেষক প্রমান
করে দেখালেন যে,
পানিকে
খুব ঠান্ডা হলে তা বরফ হয়ে
যায়। তার ছাত্ররা এই সিদ্ধান্তে
পৌছালো যে,
বরফ
পানির একটি অবস্থা। তিনি ধারনা
করলেন,
সব
বরফ বোধ হয় পানি থেকেই তৈরি
হয়।
ধরা
যাক,
এই
অবস্থায় তারও মৃত্যু হলো।
আরেক
জায়গার আরেক গবেষক প্রমান
করলেন যে,
পানি
দুইটি গ্যাসের সমন্ময়ে তৈরি
হয়,
আক্সিজেন
ও হাইড্রোজেন। আর বায়ুমন্ডলে
আক্সিজেন,
হাইড্রোজেন,
নাইট্রোজেন,
কার্বন-ডাই-অক্সাইড
ইত্যাদি গ্যাস রয়েছে।
এর
পর তারও মৃত্যু হলো। তবে তিনি
বরফ সম্পর্কে কিছু বলে গেলেন
না।
আরেক
জায়গার আরেক গবেষক প্রমান
করলেন যে,
পানি
সুর্যের তাপে বাস্প হয়ে (অর্থাৎ
আক্সিজেন ও হাইড্রোজেন-এ
বিভক্ত হয়ে)
বায়ুমন্ডলে
মিশে যায়। একসময় তারা আবার
একত্রিত হয় এবং ঠান্ডা হয় আর
বৃষ্টি রুপে ঝরে পড়ে। তিনি
আরও দেখালেন,
শুধু
পানি থেকে নয়,
অন্য
কিছু থেকেও বরফ বানানো যায়।
এর পর তারও মৃত্যু হলো। তবে
বায়ুমন্ডলে আক্সিজেন ও
হাইড্রোজেন কিভাবে ঠান্ডা
হলো,
এ
সম্পর্কে কিছু বলে গেলেন না।
প্রত্যেকেই
মৃত্যুর আগে তাদের ছাত্রদেরকে
উপদেশ দিয়ে গেলেন,
যদি
অন্য কেউ পানি সম্পর্কে আরও
কিছু প্রমান করে দেখাতে পারে,
তাহলে
তার টাও গ্রহন কোরো আর যদি
আমার কোনো সিদ্ধান্ত কেউ ভুল
বলে প্রমান করতে পারে,
তাহলে
আমারটা বর্জন কোরো আর তার টা
গ্রহন কোরো।
কালক্রমে
এই চার গবেষকের ছাত্ররা কিংবা
এই ছাত্রদের ছাত্ররা যখন
পরস্পরের সংস্পর্শে এলো তখন
তাদের কেউ কেউ অন্যদের মতবাদের
পক্ষে প্রমান থাকা স্বত্তেও
গ্রহন করলো না,
বরং
বিবাদে লিপ্ত হলো।
আবার
কেউ কেউ লক্ষ্য করলো যে,
চার
গবেষকের উদ্দেশ্যই তো এক;
পানি
নিয়ে গবেষনা। সুতরাং তারা
একত্রিতো হয়ে যেটা সত্য
প্রমানিতো হলো সেটা গ্রহন
করলো আর যেটা ভুল প্রমানিতো
হলো সেটা বর্জন করলো। এমনকি
তারা একত্রিতো হয়ে গবেষনা
করে বায়ুমন্ডলে আক্সিজেন ও
হাইড্রোজেন কিভাবে ঠান্ডা
হলো,
তাও
খুজে পেলো।
কি
বুঝলেন গল্পটি থেকে?
কারা
সঠিক কাজটি করলো?
যে
তার ইমাম বা নেতার সব কথা মেনে
চললো,
সে
তার ইমামের আনুগত্য করলো।
সুতরাং যে ব্যাক্তি ইমাম আবু
হানিফা (রাঃ)
এর
সব কথা মেনে চললো সে ইমাম হানিফা
(রাঃ)
কে
পুর্নরুপে অনুসরন করলো। এখানে
একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার,
জাতি-গোত্রে
ভাগ হওয়া কিংবা ক্যাটাগরিতে
ভাগ হওয়া আর শারিয়াগত দিক দিয়ে
ভাগ হওয়া এক কথা নয়। যেমন,
বনু
হাশিম,
বানি
ইসরইল,
চৌধুরি,
আনসার,
মুহাজির,
ওলামা,
মুজাহিদিন,
মাঝি,
জেলে,
মুচি,
কৃষক,
শিক্ষক
ইত্যাদি;
এগুলো
হচ্ছে গোত্র কিংবা কর্ম অনুযায়ি
মানুষের শ্রেনীবিভাগ। এগুলোতে
কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তখনই
যখন দ্বীনকে ভেংগে মানুষ দলে
বিভক্ত হয়। যেমন,
সুফি,
কাদিয়ানি,
নকশাবান্দি
ইত্যাদি।
এরপরও
আমরা অনেকেই বিভ্রান্ত;
কোন
দলটিকে অনুসরন করতে হবে এই
ভেবে। আল্লাহ এদের সম্পের্কেও
বলে দিয়েছেন,
আর
আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের
জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের
অন্তর রয়েছে,
তার
দ্বারা বিবেচনা করে না,
তাদের
চোখ রয়েছে,
তার
দ্বারা দেখে না,
আর
তাদের কান রয়েছে,
তার
দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ
জন্তুর মত;
বরং
তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই
হল গাফেল,
শৈথিল্যপরায়ণ।
[সুরা
আল-আরাফ
৭.১৭৯]
আপনি
কি মনে করেন যে,
তাদের
অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে?
তারা
তো চতুস্পদ জন্তুর মত;
বরং
আরও পথভ্রান্ত। [সুরা
আল-ফুরকান
২৫.৪৪]
অনুরূপ
ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ,
জন্তু,
চতুস্পদ
প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের
মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে
ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ
পরাক্রমশালী,
ক্ষমাময়।
[সুরা
ফাতির ৩৫.২৮]
আলহামদুলিল্লাহ;
আল্লাহ,
আল্লাহর
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর
সাহাবা (রাঃ)রা-
কেউ-ই
দ্বিন-আল-ইসলামে
বিভ্রান্ত হওয়ার মত সামান্যতম
ফাকা জায়গা রেখে যান নি। রব
যখন আল্লাহ তখন নিশ্চয় তার
দলকেই অনুসরন করতে হবে। কিন্তু
আল্লাহর কি কোনো দল আছে?
দেখা
যাক,
আল্লাহ
তাআলা এ সম্পর্কে কি বলেন,
যারা
আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে,
তাদেরকে
আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে
বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না,
যদিও
তারা তাদের পিতা,
পুত্র,
ভ্রাতা
অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী
হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান
লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে
শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য
শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,
যার
তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা
সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং
তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখো,
আল্লাহর
দলই সফলকাম হবে। [সূরা
মুজাদালা ৫৮.২২]
আর
যারা আল্লাহ,
তাঁর
রসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে
গ্রহণ করে,
তারাই
আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী।
[সুরা
মায়িদা ৫.৫৬]
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
"আমার
উম্মাত অচিরেই ৭৩ ফিরকায়
বিভক্ত হবে যাদের একটি মাত্র
ফিরকা জান্নাতে যাবে,
বাকি
সবাই যাবে জাহান্নামে।
সাহাবা(রাঃ)রা
জিজ্ঞাসা করলেন,
"সেটি
কারা,
ইয়া
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)?"
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উত্তর করলেন,
"আমি
এবং আমার সাহাবিরা যেই পথে,
যেই
মতে আছি সেই পথে,
সেই
মতে যারা থাকবে তারাই একমাত্র
নাজাত পাবে।”''
[সাহিহ
তিরমিজি,
হাদিস
নাম্বার ১৭১;
আবু
দাউদ,
কিতাবুজ-যাকাত,
হাদিস
নাম্বার ৪৫৭৯]
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
“মূসা(আঃ)
এর
কওম ৭১ ভাগে ভাগ হবে,৭০
ভাগ দোযখে যাবে,
এক
ভাগ বেহশতে। ঈসা(আঃ)
এর
কওম ৭২ ভাগে ভাগ হবে,
৭১
ভাগ দোযখে যাবে,
এক
ভাগ বেহশতে। যে আল্লাহর হাতে
আমার প্রাণ তার শপথ,
আমার
কওম ৭৩ ভাগে ভাগ হবে,
৭২
ভাগ দোযখে যাবে,
এক
ভাগ বেহশতে।''
তাকে
জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসুলুল্লাহ(সাঃ),
''ঐ
এক ভাগ কারা?''
তিনি
উত্তরে বললেন,
''আল
জামাহ’।''
[সুনানে
ইবনে মাজাহ,
হাদীস
নং ৩৯৮২]
রসুলুল্লাহ
(সঃ)
ও
তার সাহাবিরা সঠিক পথে ছিলেন
কি না তা নিয়ে কি কারো কোনো
সন্দেহ আছে?
কারো
সন্দেহ থাকলেও কিছু করার নেই।
কারন,
সেটা
তাদের রোগ। আমরা আল্লাহর এ
হুকুম মেনে নিলাম,
হে
ঈমানদারগণ,
আল্লাহ
ও তাঁর রসুলের নির্দেশ মান্য
কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ
হয়ো না। [সুরা
আল-আনফাল
৮.২০]
এর
পরও যারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
করবে তাদের জন্যে আল্লাহর
বলেছেন,
(হে
মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম),)
নিশ্চয়
যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড
করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে,
তাদের
সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।
তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার
নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি
বলে দেবেন যা কিছু তারা করে
থাকে। [সুরা
আল আন-আম
৬.১৫৯]
আর
যাদের সাথে রসুল সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো
সম্পর্ক নেই তারা মুসলিম আছে
কিনা সে ব্যাপারে কি কারো কোনো
সন্দেহ আছে?
লক্ষ্যনিয়,
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
''আমার
উম্মাত''
অর্থাৎ
মুসলিমদের মাঝেই ৭৩ ফিরকা
হবে,
যার
একটিমাত্র ফিরকা জান্নাতে
যেতে পারবে।
প্রশ্ন
হচ্ছে,
আমরা
এখন সেই দলটিকে চিনবো কিভাবে?
এখন
তো রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামও নেই,
তার
সাহাবা(রাঃ)রাও
নেই যে তারা আমাদেরকে বলে
দিবেন কারা সঠিকভাবে তাদেরকে
অনুসরন করছে। সুতরাং ১৫০০
বছর পর মানুষ তাদেরকে কিভাবে
অনুসরন করবে তার কোনো দিকনির্দেশনা
দিয়ে গিয়েছেন কিনা প্রথমে তা
আমাদেরকে দেখতে হবে।
আর
তাছাড়া,
আমাদের
জন্যে কোনটি সহজ হবে-
গোমরাহ
৭২ টি দলকে আলাদা আলাদা ভাবে
চেনা ও তাদের থেকে দূরে থাকা
নাকি সঠিক পথে চলা ওই একটি
ফিরকার আকিদা বুঝা ও অনুসরন
করা?
নিশ্চয়-ই
পরের টি সহজ। তবে অবশ্যই গোমরাহ
ফিরকার মৌলিক আকিদা আমাদেরকে
জানতে হবে।
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেনঃ
তোমাদের
জন্যে দুইটি জিনিসকে রেখে
যাচ্ছি-
আল্লাহর
কিতাব ও আমার সুন্নাহ। যতক্ষন
পর্যন্ত এই দু'টো
জিনিসকে আকড়ে ধরে থাকবে,
ততক্ষন
পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে
না। [সহিহ
জাম-ই
সগীর]
কুরআন-এ
বর্নিত বিজয়ী দলটির বৈশিষ্টঃ
আল্লাহ
বলেন,
(হে
মানুষ!)
যারা
ইমান এনেছো,
তোমাদের
মধ্যে যে নিজের দ্বীন থেকে
ফিরে যাবে,
অচিরেই
আল্লাহ (তোমাদের
পরিবর্তে)
এমন
সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন,
যাদেরকে
তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও
তাকে ভালবাসবে;
তারা
মুমিনদের প্রতি হবে কোমল এবং
কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর;
তারা
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে
এবং কোন নিন্দাকারীর নিন্দা
পরোয়া করবে না;
এ
(ক্ষমতাটুকু)
হচ্ছে
আল্লাহর অনুগ্রহ,
যা
তিনি যাকে চান তাকে-ই
দান করেন;
আল্লাহ
প্রাচুর্য দানকারী,
মহাজ্ঞানী।
[সুরা
মায়িদা ৫.৫৪]
হাদিসে
বিজয়ী দলটির বর্ননাঃ
মুয়াওইয়া
(রাঃ)
থেকে
বর্নিতো,
রসুল
(সঃ)
বলেছেন,
''আমার
উম্মাতের মধ্য থেকে কিয়ামাত
পর্যন্ত একটি দল আল্লাহর পক্ষ
থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে
থাকবে। তাদের বিরোধিরা তাদের
কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
তাদের সাহায্য করা যদি কেউ
ছেড়েও দেয়,
তবুও
কেউ তাদের কোনো ক্ষতি করতে
পারবে না।''
[ইবন-ই
মাজাহ,
হাদিস
নাম্বার ৬]
আরও
একটি হাদিসে রসুল (সঃ)
বলেছেন,
''কিয়ামাত
পর্যন্ত আমার উম্মাতের মধ্যে
একটি তয়্যিফা (দল)
থাকবে
যারা আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা
করতে কক্ষনো বিরত থাকবে না।
তারা সেইসব লোক থেকে নিরাপদ
যারা তাদের সাথে প্রতারনা
করে কিংবা তাদের নিন্দা করে,
যতক্ষন
পর্যন্ত না আল্লাহর হুকুম
(কিয়ামাত)
আসে;
যখনও
তারা অন্য মানুষদের ওপর
শ্রেষ্ঠ্যত্ব বজায় রাখবে।''
সহিহ মুসলিম, ৪১২, ৫০৬২; আবু দাউদ, ২৪৮৬; বাইহাকি, ১৮৩৯৬; ইবন-ই হিব্বান, ৬৮১৯ সহ হাদিসের আরও কিতাবে এ দলটি সম্পর্কে বর্নিতো রয়েছে।
উপরে
উল্লেখিত সুরা মায়িদার আয়াতটি
বিশ্লেষন করবো এবং উল্লেখিত
বৈশিষ্টগুলো থেকে আমরা সেই
দলটিকে খুজে পাওয়ার চেষ্টা
করবো।
Point
No. 1
আয়াতটি
তাদের উদ্দেশ্যে নাজিল করা
হয়েছে,
যারা
ঈমান আনার পরেও কুফরি করেছে
অর্থাৎ যারা মুরতাদ হয়েছে,
কিংবা
এক ইলাহর সাথে শিরক করেছে
কিংবা যারা মুনাফিকি করেছে
কিংবা এগুলোর কাছাকাছি কিছু
করেছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে
কথাগুলো বলা হয়েছে। এভাবেই
তারা স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে
গেছে। সুতরাং আমাদের দেখার
বিষয়,
কারা
মুমিন। এরপর,
কারা
স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে গেছে;
কারন,
এদের
পরিবর্তেই আল্লাহ আরেকটি
সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন। যে
দলের মাধ্যমে আল্লাহ পূর্ববর্তী
দলকে পরিবর্তন করবেন,
সেটা
অবশ্যই পূর্ববর্তী দলের তুলনায়
ভালো দল হবে এবং পূর্ববর্তী
দলের তুলনায় আল্লাহর অধিক
প্রিয় দল হবে। সবচেয়ে ভালো
জিনিসটিই কারো সবচেয়ে প্রিয়
হয়। আর যেহেতু আল্লাহর কাছে
তার প্রিয় হওয়ার একমাত্র উপায়
তার ইবাদাত করা। সুতরাং যারা
শ্রেষ্ঠ ইবাদাত করে তারাই
আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ,
অন্য
কথায়,
যারা
আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ তারা
নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ ইবাদাত করে।
তাহলে,
কারা
শ্রেষ্ঠ ইবাদাত করে অথবা কারা
আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ এর
যেকোনো একটির উত্তর জানলেই
অন্যটির উত্তর পাওয়া যাবে।
Point
No. 2
আল্লাহ
তাদেরকে ভালবাসবেন এবং তারাও
আল্লাহকে ভালবাসবে।
Point
No. 3
তারা
মুমিনদের প্রতি হবে কোমল এবং
কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর।
Point
No. 4
তারা
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে
এবং কোন নিন্দাকারীর নিন্দা
পরোয়া করবে না।
Point
No. 5
এ
(ক্ষমতাটুকু)
হচ্ছে
আল্লাহর অনুগ্রহ,
যা
তিনি যাকে চান তাকে-ই
দান করেন;
আল্লাহ
প্রাচুর্য দানকারী,
মহাজ্ঞানী।
Point
No. 1 এর
ব্যাখ্যা
মুমিন
কারা?
আলিফ
লাম মীম। [সুরা
আল বাক্বরহ ২.১]
এ
সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ
নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের
জন্য,
[সুরা
আল বাক্বরহ ২.২]
যারা
অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা
করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী
দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
[সুরা
আল বাক্বরহ ২.৩]
এবং
যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে
সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার
প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব
বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের
প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর
আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে
বিশ্বাস করে। [সুরা
আল বাক্বরহ ২.৪]
তারাই
নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ
থেকে সুপথ প্রাপ্ত,
আর
তারাই যথার্থ সফলকাম। [সুরা
আল বাক্বরহ ২.৫]
তারাই
মুমিন,
যারা
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি
ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ
করে না এবং প্রাণ ও ধন-সম্পদ
দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। [সুরা
হুজুরত ৪৯.১৫]
আল্লাহ
মুমিনদের থেকে তাদের জান ও
মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের
বিনিময়ে। তারা আল্লাহর রাস্তায়
যুদ্ধ করে অতঃপর মারে ও মরে।
তওরাত,
ইঞ্জিল
ও কোরআনে তিনি (বিনিময়ের)
এ
সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল।
আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি
রক্ষায় কে অধিক?
সুতরাং
তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের
উপর, যা
তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ
হল মহান সাফল্য। [সুরা
আত-তাওবা
৯.১১১]
(যাদের
কাছ থেকে আল্লাহ জান ও মাল
ক্রয় করবেন)
তারা
(অর্থাৎ
মুমিনরা)
তওবাকারী,
এবাদতকারী,
শোকরগোযার,
(দুনিয়ার
লোভ-লালসার
সাথে)
সম্পর্কচ্ছেদকারী,
রুকু
ও সিজদা আদায়কারী,
সৎকাজের
আদেশ দানকারী ও অসৎ কাজ থেকে
নিষেধকারী এবং আল্লাহর দেওয়া
সীমাসমূহের হেফাযতকারী।
বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও মুমিনদেরকে।
[সুরা
আত-তাওবা
৯.১১২]
তারা
ধৈর্য্যধারণকারী,
সত্যবাদী,
নির্দেশ
সম্পাদনকারী,
সৎপথে
ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা
প্রার্থনাকারী। [সুরা
আল-ইমরান
৩.১৭]
মুমিনগণ
সফলকাম হয়ে গেছে,
[সুরা
আল মুনিনুন ২৩.১]
যারা
নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
[সুরা
আল মুনিনুন ২৩.২]
যারা
অনর্থক কথা-বার্তায়
লিপ্ত হয় না,
[সুরা
আল মুনিনুন ২৩.৩]
যারা
যাকাত দান করে থাকে [সুরা
আল মুনিনুন ২৩.৪]
এবং
যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে
সংযত রাখে। [সুরা
আল মুনিনুন ২৩.৫]
এবং
যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে
হুশিয়ার থাকে। [সুরা
আল মুনিনুন ২৩.৮]
এবং
যারা তাদের নামাযসমূহের খবর
রাখে। [সুরা
আল মুনিনুন ২৩.৯]
আর
যারা ঈমান এনেছে,
নিজেদের
ঘর-বাড়ী
ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে
আশ্রয় দিয়েছে,
সাহায্য-সহায়তা
করেছে,
তাঁরা
হলো সত্যিকার মুসলিম। তাঁদের
জন্যে রয়েছে,
ক্ষমা
ও সম্মানজনক রুযী। [সুরা
আল-আনফাল
৮.৭৪]
মুমিন
তো তারাই;
যারা
আল্লাহর ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং রসূলের সাথে
কোন সমষ্টিগত কাজে শরীক হলে
তাঁর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ
ব্যতীত চলে যায় না। যারা আপনার
কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে,
তারাই
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করে। অতএব
তারা আপনার কাছে তাদের কোন
কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে
আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা
অনুমতি দিন এবং তাদের জন্যে
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল,
মেহেরবান।
[সুরা
আন-নুর
২৪.৬২]
অতএব,
(হে
নাবি!)
আপনার
রবের কসম,
ঐ
ব্যাক্তি মুমিন হতেই পারে
না, যতক্ষণ
না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের
ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক
বলে মনে করে। অতঃপর আপনার
মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে
কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না
এবং তা খুশিমনে কবুল করে নেবে।
[সুরা
আন-নিসা
৪.৬৫]
ইমানের
অংশঃ
-
তগুতের
বিরুদ্ধে কুফরি করা।
-
এক
আল্লাহর ওপর ইমান আনা।
ইমানের
স্তম্ভসমুহঃ
-
আল্লাহর
ওপর ইমান অর্থাৎ আল্লাহ এক,
তার
কোনো শরিক নেই;
তার
অস্তিত্ব আছে,
আকার
আছে তবে সে আকার তার সৃষ্ট
কোনো কিছুর সাথে তুলনীয় নয়;
তিনি
সবখানে ও সবকিছুতে বিদ্যমান
নন;
তার
আরশে তিনি সমাসীন।
-
মালাইকা
অর্থাৎ ফেরেশতাদের ওপর ইমান।
-
আল্লাহর
নাজিলকৃত কিতাবসমুহের ওপর
ইমান।
-
রসুলদের
ওপর ইমান।
-
আখিরাত
অর্থাৎ মৃত্যু পরবর্তি জীবনের
ওপর ইমান।
-
আল-ক্বদর
অর্থাৎ ভাগ্যের ওপর ইমান।
ইমানের
শর্তসমুহঃ
প্রথম
শর্তঃ ইলম বা
জ্ঞান
ইলম
বা জ্ঞানকে বান্দার ইসলাম
কবুলের প্রথম শর্ত নিধারণ
করা হয়েছে। কারন,
জ্ঞান
ছাড়া মানুষ তাওহীদ অর্থাৎ
আল্লাহর একত্ত্ববাদ বুঝবে
কিভাবে?শাহাদাহ-এর
শব্দসমূহের জ্ঞান অর্জনঃ
কালেমা দু’ইটি
অর্থপূর্ণ বাক্যের সমষ্ঠি-
আল্লাহ
ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন
ইলাহ (রব)
নেই
এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
আল্লাহ
প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল।
কালেমার প্রথম অংশকে ‘‘তাওহীদ’’
ও দ্বিতীয় অংশকে ‘‘রিসালাত’’
বলা হয়। উভয় অংশে
বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
দ্বিতীয়
শর্তঃ নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস
স্থাপন
আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহ রাসূল (সাঃ), ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, বিচার দিবস, তাক্দীর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না।
যে আল্লাহ ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করে সে মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ [সুরা আন-নিসা ৪.১৩৬]
আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহ রাসূল (সাঃ), ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, বিচার দিবস, তাক্দীর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না।
যে আল্লাহ ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করে সে মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ [সুরা আন-নিসা ৪.১৩৬]
তৃতীয়
শর্তঃ অপ্রকাশ্যে
এবং প্রকাশ্যে ঈমানের
স্বীকৃতি
তাওহীদ ও রিসালাতের ব্যাপারে একইসাথে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা ও কাজে তা প্রকাশ করা ছাড়া ঈমান গ্রহনযোগ্য হবে না। এর যে কোনো একটিরও অনুপস্থিতি ঈমান বলে বিবেচিতো হবে না।
তাওহীদ ও রিসালাতের ব্যাপারে একইসাথে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা ও কাজে তা প্রকাশ করা ছাড়া ঈমান গ্রহনযোগ্য হবে না। এর যে কোনো একটিরও অনুপস্থিতি ঈমান বলে বিবেচিতো হবে না।
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর চাচা আবু তালেব
অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও
রাসূল (স.)
কে
সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর
নবুওয়াতের ব্যাপারেও বিশ্বাসী
ছিলেন। কিন্তু মৃত্যু শয্যায়
শায়িত অবস্থায় কোরাইশ নেতাদের
সম্মুখে ‘কালেমা শাহাদার’
মৌখিক স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ
হওয়ায় শেষ বিচারের দিনে তাকে
(আবু
তালেব)
জাহান্নামের
উত্তপ্ত জুতা পরানো হবে।
চতুর্থ
শর্তঃ কুরআন ও সুন্নাহ নিকট
পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ
আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং আর কিছু আয়াত অমান্য করা যাবে না।
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন। [সুরা বাক্বরা ২.৮৫]
আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং আর কিছু আয়াত অমান্য করা যাবে না।
তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? অতএব তোমাদের মধ্যের যারা এরকম করে তাদের ইহজীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া আর কী পুরস্কার আছে? আর কিয়ামতের দিনে তাদের ফেরত পাঠানো হবে কঠোরতম শাস্তিতে। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ সে-বিষয়ে অজ্ঞাত নন। [সুরা বাক্বরা ২.৮৫]
ষষ্ঠ
শর্তঃ অন্তরের
একাগ্রতা
অন্তরের একাগ্রতা ইমানের একটি শর্ত। যে কোনো ইবাদাতে আপনার একাগ্রতা আছে কিনা নিয়্যাত ঠিক আছে কিনা আল্লাহ এগুলোই দেখতে চান। নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা (ইখলাস আন-নিয়্যাহ) ইবাদত কবুলের জন্য একটি শর্ত। অনেকে নিয়্যাত মুখে উচ্চরন করে থাকেন। এটা নিয়্যাতের কোনো শর্ত নয়। তাছাড়া, আপনি কি উদ্দেশ্যে ইবাদাত করছেন তা তো আল্লাহ জানেন এবং এটাই তিনি দেখবেন। তাহলে মুখে উচ্চরনের কি প্রয়োজন? আপনার অন্তর ঠিক আছে কিনা তাই দ্যাখেন।
অন্তরের একাগ্রতা ইমানের একটি শর্ত। যে কোনো ইবাদাতে আপনার একাগ্রতা আছে কিনা নিয়্যাত ঠিক আছে কিনা আল্লাহ এগুলোই দেখতে চান। নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা (ইখলাস আন-নিয়্যাহ) ইবাদত কবুলের জন্য একটি শর্ত। অনেকে নিয়্যাত মুখে উচ্চরন করে থাকেন। এটা নিয়্যাতের কোনো শর্ত নয়। তাছাড়া, আপনি কি উদ্দেশ্যে ইবাদাত করছেন তা তো আল্লাহ জানেন এবং এটাই তিনি দেখবেন। তাহলে মুখে উচ্চরনের কি প্রয়োজন? আপনার অন্তর ঠিক আছে কিনা তাই দ্যাখেন।
সপ্তম
শর্তঃ আল ওয়ালা এবং ওয়াল
বারা
আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং ঘৃণা করা। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে ভালবাসতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই এবং ঘৃণাও করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই।
আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং ঘৃণা করা। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে ভালবাসতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই এবং ঘৃণাও করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই।
[সুরা
আত-তওবা
৯.২৩]
হে
ঈমানদার লোকেরা,
নিজেদের
পিতা ও ভাইকেও বন্ধু (সমর্থক
ও সাহায্যকারী)
হিসেবে
গ্রহন করিও না যদি তারা ঈমান
অপেক্ষা কুফরকে অধিক ভালবাসে।
তোমাদের যে লোকই এই ধরনের
লোকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে
সে-ই
যালেম (অন্যায়কারী)
হবে।’’
সুরা
আত-তাউবা
৯[১১৩].২৪.বল,
তোমাদের
নিকট যদি তোমাদের পিতা,
তোমাদের
সন্তান,
তোমাদের
ভাই তোমাদের পত্নী,
তোমাদের
গোত্র,
তোমাদের
অর্জিত ধন-সম্পদ,
তোমাদের
ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার
ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-
যাকে
তোমরা পছন্দ কর-
(সেগুলি
যদি)
আল্লাহ,
তাঁর
রসূল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ
করা থেকে অধিক প্রিয় হয়,
তবে
অপেক্ষা কর,
আল্লাহর
রায় আসা পর্যন্ত,
আর
আল্লাহ তো ফাসেক সম্প্রদায়কে
হিদায়াত করেন না।
হে
মুমিণগণ!
তোমরা
ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু
হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা
একে অপরের বন্ধু। তোমাদের
মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব
করবে,
সে
তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ
জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন
না। [সুরা
আল-মায়িদা
৫.৫১]
“হে
মুমিনগণ,
তোমাদের
মধ্যে যে নিজ দ্বীন থেকে ফিরে
যাবে...”
এর
অর্থ কি?
যেহেতু
মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা
হচ্ছে সুতরাং মুমিনদের দ্বীন
থেকে ফিরে যাওয়া বলতে মূলত
যারা ইবাদাত করে অর্থাৎ যারা
নিজেদেরকে মুমিন বলে মনে করে
অথচ ইসলামী দীন অর্থাৎ
জীবনব্যাবস্থা হিসেবে ইসলাম
মানে না তাদেরকে বুঝানো হয়েছে।
মুনাফিকরাও এই দলে। বে-দ্বীন
হয়ে যাওয়ার আরেক অর্থ ঈমান
আনার পরেও কুফরি
করা বা মুরতাদ হওয়া।
তাহলে
আমাদেরকে দেখতে হবে কি কি
কারনে ঈমান ধ্বংস হয় এবং
''অধিকাংশ
মানুশ আল্লাহর প্রতি ইমান
আনা সত্তেও মুশরিক [সুরা
ইউসুফ ১২.১০৬]''
কিভাবে
হয়।
যে
সব বিষয় ‘‘শাহাদাহ’’
(লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ)
অকার্যকর
করে
একঃ
আস-শিরক।
[সুরা
আজ-ঝুমার
৩৯.৬৫]
আর
(হে
নাবি,)
আপনার
কাছে ও আপনার আগে যারা ছিলেন
তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে
প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে-
''যদি
আপনি শিরক করেন তাহলে আপনার
কাজকর্ম নিশ্চয়ই নিষ্ফল হয়ে
যাবে এবং আপনি নিশ্চয়ই হয়ে
যাবেন ক্ষতিগ্রস্তদের
মধ্যেকার।’’
দুইঃ
যে ব্যক্তি তার নিজের এবং
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
মধ্যে মধ্যস্থতা ও যোগাযোগের
মাধ্যম বানায় কিংবা তাদের
কাছে তার মনোস্কামনা পূরণের
(শাফায়া)
জন্য
আবেদন-নিবেদন
করে কিংবা তাদের ওপর নির্ভর
করে।
তিনঃ
কাফির বা মুশরিকের কাফির বা
মুশরিক হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ
পোষন করা। উদাহরণ স্বরূপ,
যদি
কোন লোক বলে যে,
সে
নিশ্চিত নয় একজন খৃষ্টান কাফির
কি না,
তাহলে
সে নিজেই একজন কাফির হয়ে যায়
কারণ সে ঈসাকে (আঃ)
কে
খোদা-পুত্র
হিসেবে গ্রহণকারী খৃষ্টানদের
প্রত্যাখ্যান করেনি।
চারঃ আল্লাহ নির্ধারিত ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রচারিত দ্বীনের পরিপূর্ণতা ও তার দিক নির্দেশনা বা ফায়সালায় অস্বীকার কিংবা সন্দেহ করা। কারন, “...নাবি (সঃ) মনগড়া কথা বলেন না। তার ওপর যা নাজিল হয় তা-ই কেবল বলেন।” [সুরা আন-নাজম ৫৩.০৩-০৪]
পাঁচঃ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুন্নাহতে অসন্তুষ্ট হওয়া
(তা
সে পালন করুক আর না-ই
করুক)।
উদাহরণ হতে পারে এমন এক ব্যক্তি,
যে
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাত
পড়ে অথচ সে এগুলো করা অপছন্দ
করে অথবা এমন এক মহিলা যে হিজাব
পরে অথচ সে তা পরা অপছন্দ করে।
ছয়ঃ
দ্বীনের কোনকিছুর ব্যাপারে
উপহাস করা বা কৌতুক
করে অথবা ইসলামের কোন পুরস্কার
বা শাস্তির ব্যাপারে ব্যাঙ্গ
করা।
হে
মুমিনগণ,
আহলে
কিতাবদের মধ্য থেকে যারা
তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা
মনে করে,
তাদেরকে
এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু
রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে
ভয় কর,
যদি
তোমরা ঈমানদার হও। [সুরা
আল-মায়িদা
৫.৫৭]
সাতঃ
জাদু (আস-শিহর)।
সকল প্রকার জাদু নিষিদ্ধ।
কেউ এতে অংশগ্রহণ করুক,
সময়
ব্যয় করুক বা চর্চার প্রতি
সহানুভূতিশীল হোক না কেন। যে
ব্যক্তি জাদু চর্চা করে বা
জাদুতে তৃপ্ত হয়,
সে
কাফির হয়ে যায়। তবে
হতসাফাই ও ভেলকিবাজির ব্যাপারে
মতভেদ রয়েছে। মুমিনদের জন্যে
সীমারেখা হচ্ছে,
করআন
ও সুন্নাহর আলোকে শিহর ও
বদ-জিনের
প্রতিরোধ ও প্রতিকার।
আটঃ
কাফির-মুশরিককে
মুসলমানের বিরুদ্ধে সাহায্য
ও সমর্থন করা।
নয়ঃ
শারিয়াহ এর মধ্যে (আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আইন)
কোনোকিছু
যোগ করা অথবা এর কতিপয় বিষয়
বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামের
উন্নতি সাধন করার
চেষ্টা কিংবা চিন্তা।
দশঃ
কুরআন ও হাদিসের যে
কোনো একটিকে মানা অন্যটিকে
না মানা। কারন কুরআন হলো
নির্দেশনা এবং হাদিস হলো তার
ব্যাখ্যা। আর তাছাড়া হাদিসও
তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার পরোক্ষ উক্তি। সুতরাং
যে রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর
সুন্নাহ অমান্য
করলো,
সে
তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার-ই
অমান্য করলো।
উপরে
উল্লেখিত কারন গুলোর মাধ্যমে
একজন মুমিনের ঈমান নষ্ট হয়ে
যায়;
সে
তা মানুক আর না-ই
মানুক।
(হে
রসুল সঃ,
আপনি
এদেরকে)
বলুন,
পৃথিবী
এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে,
তা
কার?
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৪]
তারা
বলবে,
সবই
আল্লাহর। বলুন,
তবুও
কি তোমরা চিন্তা করবে না ?
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৫]
বলুন,
সপ্তাকাশ
ও মহা-আরশের
মালিক কে ?
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৬]
তারা
বলবে,
আল্লাহ।
বলুন,
তবুও
কি তোমরা ভয় করবে না ?
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৭]
বলুন,
তোমাদের
জানা থাকলে বল,
কার
হাতে সব বস্তুর কতৃর্ত্ত,
যিনি
রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে
কেউ রক্ষা করতে পারে না ?
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৮]
তারা
বলবে,
আল্লাহর।
[সুরা
আল-মুমিনুন
২৩.৮৯]
আর
যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস
করেন,
কে
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন
এবং তার সাহায্যে মৃত পতিত
ভূমিকে সঞ্জীবিত করেছেন,
তাহলে
তারা অবশ্যই বলবে,
আল্লাহ
৷
বলুন,
সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর জন্য;
কিন্তু
অধিকাংশ লোক বোঝে না। [সুরা
আনকাবুত ২৯.৬৩]
তোমরা
যদি এসব লোকদের জিজ্ঞেস করো,
যমীন
ও আসমান কে সৃস্টি করেছে,
তাহলে
এরা নিজেরাই বলবে,
ঐগুলো
সেই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী
সত্তা সৃষ্টি করেছেন ৷[সুরা
আয-যুখরুফ
৪৩.৯]
উপরের
আয়াতগুলো এটাই প্রমান করে
যে,
যুগে
যুগে মানুশ রব হিসেবে আল্লাহকেই
মেনে এসেছে। এমনকি আমাদের
অনেকের চেয়ে ভালোভাবে মানতো।
তারা এরকম টা চিন্তাও করতো
না যে,
এ
বছর ফসলে ভালো করে সার কিংবা
পানি সেচ দেওয়া হয়েছে বলে ফসল
ভালো হয়েছে;
অথবা
আমি নিজ চেষ্টায় সম্পদশালী
হয়েছি। ফিরআউন নিজেকে মহাবিশ্বের
রব দাবি করেন নি;
শুধু
মিশর ভু-খন্ডের
রব দাবি করেছিলো। ''ফেরাউন
তার সম্প্রদায়কে ডেকে বলল,
হে
আমার কওম,
আমি
কি মিসরের অধিপতি নই?
এই
নদী গুলো আমার নিম্নদেশে
প্রবাহিত হয়,
তোমরা
কি দেখ না?
[সুরা
আজ-যুখরুফ
৪৩.৫১]''।
শাইতন নিজেও তার
ক্ষমতাগুলো আল্লাহর কাছ থেকেই
চেয়ে নিয়েছে ''সে
বলল,
হে
আমার রব,
আপনি
আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত
অবকাশ দিন। [সুরা
সদ ৩৮.৭৯]''
এবং
সে নিজেই স্বীকার করেছে যে,
সে
আল্লাহকে ভয় করে। ''...তখন
শয়তান বলে,
তোমার
সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
আমি আল্লাহকে ভয় করি। [সুরা
হাশর ৫৯.১৬]''।
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর আব্বার নাম আবদুল্লাহ,
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর জন্মের আগেই যার
মৃত্যু হয়। এই আবদ-উল্লাহ
অর্থাৎ আল্লাহর আবদ নামটি
কিভাবে হতে পারে যদি কুরইশরা
আল্লাহকে না মানতো?
এটাও
তো বলার উপায় নেই যে,
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তার আব্বার কাছে কিংবা
তারও অভিভাবকদের কাছে ইসলামের
বানি প্রচার করার ফলে তারা
এটা করেছে। সেটা কি সম্ভব?
রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কুরইশ বংশের আরও
অনেকের নাম দেখেই বুঝা যায়,
তারা
রব হিসেবে আল্লহকেই মানতো।
বদর-এর
জিহাদের আগের রাতে আবু-জাহল
দুয়া করেছিলো আল্লাহর কাছে,
যেন
তিনি আসন্ন যুদ্ধে সেই দলটিকেই
বিজয়ী করেন যে দলটি তার কাছে
আধিক পছন্দনিয়।
লক্ষ্যনিয়,
আবু
জাহল তার রবকে ভয় করতেন বলেই
মুসলিমদের তুলনায় অনেক শক্তিশালি
সামরিক শক্তির অধিকারি হয়েও
অহংকারি হন নি।
আব”রহা
যখন মাক্কা আক্রমন করে ক্বাবা
ঘর ভাংতে চেয়েছিলো তখন তৎকালিন
মুতাওয়াল্লি আব্দুল মুত্তালিব
তাকে বলেছিলেন,
"ওই
ক্ববার মালিক আমি নই;
ওই
ক্ববার মালিক স্বয়ং আল্লাহ,
তিনিই
তার ক্বাবা হিফাজাত করবেন।
তোমার যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে
ভাঙ্গো।"
তারা
সবাই আল্লাহকে মেনেছে। তার
পরও তারা কাফির। তারা শিরক
করেছে।
বে-দ্বীনদেরকে
কাদের দ্বারা প্রতিস্থাপন
করা হবে?
তোমরাই
হলে সর্বোত্তম উম্মত,
মানবজাতির
কল্যানের জন্যেই তোমাদের
উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা
সৎকাজের আদেশ দিবে ও অন্যায়
কাজে বাধা দিবে এবং আল্লাহর
প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা
যদি ঈমান আনতো,
তাহলে
তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো।
তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে
ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো
পাপাচারী। [সুরা
আল-ইমরান
৩.১১০]
এই
আয়াতটি ব্যাপক অর্থ বহন করে।
অপেক্ষাকৃত ভালো কিছু দিয়ে
মন্দকে প্রতিস্থাপন করা যায়।
কিন্তু আল্লাহ সুবনাহু তাআলা
এখানে অপেক্ষাকৃত ভালো কিছু
দিয়ে মন্দকে প্রতিস্থাপন
করার কথা বলেন নি;
বরং
সর্বোত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন
করার কথা বলেছেন। লক্ষ্যনিয়,
আয়াতটি
বর্তমান কাল নির্দেশ করছে।
অর্থাৎ কিয়ামাত পর্যন্ত যে
কেউ যে মুহুর্তেই এ আয়াতটি
পড়বে তার জন্যে আয়াতটির হুকুম
সমসাময়িক হবে। আরো লক্ষ্যনিয়,
আয়াতটিতে
সৎ কাজের উপদেশ কিংবা অসৎ কাজ
না করার অনুরোধ বলা হয় নি;
বরং
সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে
বাধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়া
কখনো সম্ভব নয়। আবার গনতান্ত্রিক
পদ্ধতিতে তা অর্জন কিংবা
বাস্তবায়ন,
কোনোটিই
আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।
আবার তাগুতের সাথে আপোষ করাও
নিষিদ্ধ। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে
লড়াই করা ছাড়া আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠা করার আর কি উপায়
আছে?
Point
No. 2 এর
ব্যাখ্যা
আল্লাহ
তাদেরকে ভালবাসবেন এবং তারাও
আল্লাহকে ভালবাসবে। আল্লাহ
কাদেরকে ভালবাসেন তা আল্লাহ
নিজেই জানিয়েছেন। কিন্তু
আল্লাহকে কারা ভালোবাসে?
সবাই-ই
তো দাবি করে যে তারা আল্লাহকে
ভালোবাসে। জটিল ব্যাপার,
তাই
না?
না,
খুবই
সহজ,
আল্লাহকে
তারাই ভালোবাসে যারা আল্লাহর
বিধানগুলো সঠিকভাবে মেনে
চলে। কারন তারা আল্লাহকে ভালো
না বাসলে আল্লাহর বিধানগুলো
সঠিকভাবে মেনে চলতো না।
আল্লাহর
পথে সম্পদ ব্যয় করো,
নিজের
হাতেই নিজেদেরকে ধ্বংসের
অতলে নিক্ষেপ করো না;
আর
তোমরা
(মানুষদের
প্রতি)
অনুগ্রহ
করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
আল-বাক্বরা
২(৪৭).১৯৫]
(হে
নাবি!)
বলুন,
যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো,
তাহলে
আমাকে অনুসরণ করো,
যাতে
আল্লাহও তোমাদেরকে
ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ
ক্ষমা করে দেন। আর
আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী ও
দয়ালু। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).৩১]
অবশ্যই
আল্লাহ মুত্তাকিনদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).৭৬]
সচ্ছল
হোক কিংবা অসচ্ছল হোক,
যারা
সর্বাবস্থায় আল্লাহর রাস্তায়
ব্যয় করে,
যারা
(হিংসাজাত)
ক্রোধ
সংবরন করে এবং (দয়া
দেখানো অথবা সংশোধনের সুযোগ
দেওয়ার উদ্দেশ্যে)
মানুষকে
ক্ষমা করে;
বস্তুত,
আল্লাহ
(ওই
সব)
সৎকর্মশীলদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).১৩৪]
আর
বহু নবী ছিলেন,
যাদের
সঙ্গী-সাথীরা
তাদের অনুবর্তী হয়ে জিহাদ
করেছে;
আল্লাহর
পথে। তাদের কিছু
কষ্ট হয়েছে বটে,
কিন্তু
আল্লাহর রাহে তারা হার
মানেনি,
ক্লান্তও
হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা
সবর করে,
আল্লাহ
তাদেরকে ভালবাসেন। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).১৪৬]
আর
যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).১৪৮]
অতঃপর
যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করে ফেলেন,
তখন
আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন
আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের
ভালবাসেন। [সুরা
আল-ইমরান
৩(৯৭).১৫৯]
আল্লাহ
তাদেরকে ভালবাসেন,
যারা
তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই
করে,
যেন
তারা সীসাগালানো প্রাচীর।
[সুরা
আস-সফ
৬১(৯৮).৪]
নিশ্চয়
আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
মুমতাহিনা ৬০(১১০).৮]
আর
আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।
[সুরা
আত-তাওবা
৯(১১৩).১০৮]
আল্লাহ
অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।
[সুরা
আল-মায়িদা
৫(১১৪).১৩]
নিশ্চয়
আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে
ভালবাসেন। [সুরা
আল-মায়িদা
৫(১১৪).৪২]
আল্লাহ
সৎকর্মীদেরকে ভালবাসেন।
[সুরা
আল-মায়িদা
৫(১১৪).৯৩]
যারা
ঈমান আনে এবং সৎকর্ম
সম্পাদন করে,
তাদেরকে
দয়াময় আল্লাহ ভালবাসা দেবেন।
[সুরা
মারইয়াম ১৯(৫৮).৯৬]
Point
No. 3 এর
ব্যাখ্যা
তারা
মুমিনদের প্রতি কোমল এবং
কাফেরদের প্রতি কঠোর
কারা
আজ মুমিনদের প্রতি কোমল এবং
কাফেরদের প্রতি কঠোর?
এখানে
একটি বিষয়ে বলা প্রয়োজন,
কাফির
হচ্ছে সে-ই
যে দ্বীনের কোনো বিষয় অস্বীকার
করে। সেই অর্থে একজন মুনাফিক,
একজন
মুশরিক;
যে-ই
দ্বীনের কোনো বিষয় অস্বীকার
করে সে-ই
কাফির। সুতরাং এখানে কফিরদের
প্রতি কঠোরতা বলতে দ্বীনের
পুর্ন কিংবা আংশিক উভয়
অস্বীকারকারীর প্রতি কঠোরতা
বুঝানো হয়েছে।মুমিনদের প্রতি কোমল বলতে তারা অন্য মুমিনদের প্রতি সহানুভুতিশীল, সমব্যাথী হবে। বিশ্বের পুর্ব প্রান্তরের একজন মুসলিম তার ভাই, পশ্চিমের একজন মুসলিমা তার বোন; যখন উত্তরের একজন মুসলিমের ইমানের দৃঢ়তা জানতে পারে তখন সে খুশি হয় আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, যখন দক্ষিনের একজন মুসলিমের অত্যাচারিত হওয়ার খবর শোনে তখন সে ব্যাথিত হয়।
এখন কেউ যদি এমন মনে করে, আমি মুসলিম, আমি আমার দ্বীনের ওপর আছি; আর কে কি অবস্থায় থাকলো তাতে আমার কি? ভালো যুক্তি, তবে দেখতে হবে ইসলামে এর বিধান কি।
মুমিনদের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আহবান করেছেন,
আর
তোমাদের কি হলো,
তোমরা
আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ
না;
অথচ
দুর্বল পুরুষ,
নারী
ও শিশুরা ফরিয়াদ করে বলছে,
হে
আমাদের রব!
আমাদেরকে
এই জালিম অধ্যুষিত জনপদ থেকে
মুক্ত করুন;
আর
আপনার পক্ষ থেকে নির্ধারণ
করে দিন একজন ওলী;
নির্ধারণ
করে দিন একজন সাহায্যকারী।
[সুরা
আন-নিসা
৪.৭৫]
মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। [সুরা আল-ফাতহ ৪৩.২৯]
হে নাবী, কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। [সুরা আত-তাহরিম ৬৬.৯]
অতএব আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম করুন। [সুরা আল-ফুরকান ২৫.৫২]
হে
নাবী,
কাফেরদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করুন এবং মুনাফিকদের প্রতি
কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের
ঠিকানা হল জাহান্নাম
এবং তা হল নিকৃষ্ট ঠিকানা।
[সুরা
আত-তাওবা
৯.৭৩]
তোমরা
যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের
ঐ লোকদের বিরুদ্ধে,
যারা
আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে
না,
আল্লাহ
ও তাঁর রসূল যা হারাম করে
দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং
গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম,
যতক্ষণ
না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান
করে। [সুরা
আত-তাওবা
৯.২৯]
আর
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই
করো,
যে
পর্যন্ত না ফিতনার অবসান হয়
এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত
হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে
যায় তাহলে কারো প্রতি কোন
জবরদস্তি নেই,
কিন্তু
যারা যালিম (তাদের
ব্যাপারে আলাদা)।
[সুরা
বাক্বরাহ ২.১৯৩]
Point
No. 4 এর
ব্যাখ্যা
তারা
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে
এবং কোন নিন্দাকারীর নিন্দা
পরোয়া করবে না।
জিহাদ
কি?
প্রতিটি
মানুশের সুন্দরভাবে বেচে
থাকার অধিকার রয়েছে। আর
সুন্দরভাবে বেচে থাকার জন্যে
প্রয়োজন একটি জীবনব্যাবস্থা।
ইসলাম একটি জীবনব্যাবস্থা।
একটি জিবনব্যবস্থা কল্পনাও
করা যায়না যদি না তার কোনো
রাস্ট্রিয় ভিত্তি থাকে। ইসলাম
প্রদত্ত রাস্ট্রব্যবস্থার
নাম খিলাফাত। একটি রাস্ট্রব্যবস্থা
কখনই পূর্ণ হতে পারে না যদি
তার আইন-কানুন
না থাকে,
সেই
আইন-কানুন
মান্য করার ব্যাপারে যদি
বিধিনিশেধ না থাকে,
সর্বোপরি
যদি তার কোনো প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা
না থাকে। কোনো অপরাধের ব্যাপারে
শুধুমাত্র ক্ষমা অথবা শুধুমাত্র
শাস্তি-
কোনোটাই
গ্রহনজোগ্য সমাধান হতে পারে
না। জনগনের সাভাবিক জিবনধারা
নিশ্চিত করার জন্যে যেমনি
প্রয়োজন শিষ্ঠের সমাদর,
তেমনি
প্রয়োজন দুস্টের দমন। সৎ
কর্মের পথ সুগম রাখা,
অন্যায়ের
প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং
অন্যায়কারির শাস্তি বাস্তবায়নের
মাধ্যমেই কেবল শান্তির স্থায়িত্ব
সম্ভব। এছাড়াও দুর্বলের ওপর
সবলের আত্যাচার রোধ করা,
একজন
মানুশের চিরায়ত রিপুগুলোর
দারা অন্য কারো ক্ষতির সম্ভাবনা
রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা
গ্রহন করাও জরুরি।
এই
সব কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন
করার যে তরিকা-
তার
নামই হচ্ছে জিহাদ। আর যারা
এই সব কাজের দায়িত্বে রতো
তারাই হচ্ছেন মুজাহিদিন।
আল্লাহর
দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত
করা ও সম-উন্নত
রাখার জন্যে সর্বোচ্চ চেস্টার
নামই জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ।
জিহাদ কথাটি অধিকাংশ মুসলিম
ও অমুসলিমের উভয়ের কাছেই
সবচেয়ে ভুলবুঝা শব্দ। জিহাদের
৪০ থেকে ৪৪ টি উপায় বা ধরন
রয়েছে। যার মধ্যে হিকমাহপুর্ন
কথার জিহাদ ও সম্পদের জিহাদও
রয়েছে। একটি দেশের প্রতিরক্ষা
ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে
রাখার জন্যে সংগ্রাম যেমন
সর্বোচ্চ সম্মানের,
আল্লাহর
জামিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন
ও তা রক্ষার জন্যে সংগ্রাম
একজন মুসলিমের জন্যে সর্বোচ্চ
সম্মানের। যারা মুসলিম তারা
মানবে আল্লাহর আইন,
আর
অন্যরা কি মানবে তা তাদের
ব্যাপার। এখন,
যৌক্তিকভাবে,
অন্যরা
তাদের স্বার্থ রক্ষায় যদি
অস্ত্র হাতে নিতে পারে,
তাহলে
মুসলিমরাও তা পারে। এখানে
ভুল বুঝাবুঝির তো কিছু দেখি
না। মানুষ হয়ে যদি তোমরা
তোমাদেরই মতো মানুষের আইন
মানতে পারো,
তাহলে
মুসলিমরা কেনো তাদের স্রষ্ঠার
আইন মানতে পারবে না?
আল্লাহ
বলেছেন,
''তোমাদের
উপর কিতাল (যুদ্ধ)
ফরয
করা হয়েছে...
[সুরা
বাক্বারাহ ২.২১৬]''।
আর
রসুলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেন,
''জিহাদ
ফি সাবিলিল্লাহ হচ্ছে ইসলামের
সর্বোচ্চ চুড়া। [সুনান-ই
তিরিমিজি ১২৫]''।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ আলিমগন এ বিষয়ে একমত যে, কুরআন ও হাদিসে ''ফি-সাবিলিল্লাহ'' বলতে ''জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ''-কেই নির্দেশ করা হয়েছে।
সকল মাজহাবের ইমামগন এ বিষয়ে একমত, জিহাদ চারটি অবস্থায় ফারদুল আইন (নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয়) হয়; যার দুইটি হলো,
কাফিররা
যদি কোনো মুসলিম ভুখন্ডে
আক্রমন করে
এবং
কাফিররা
যদি কোনো মুসলিম ভুমিতে তাদের
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে
ঢুকে পড়ে
তাহলে
সেই ভুখন্ডের মুসলিমদের জন্যে
জিহাদ ফারদুল আইন হয়ে যায়।
এখন যদি সংস্লিষ্ট জনপদের
মুসলিমরা জিহাদ করতে না পারে
অথবা না করে তাহলে যতক্ষন
পর্যন্ত ওই জনপদে আল্লাহর
হুকুম পুনরায় প্রতিষ্ঠিতো
না হয় ততক্ষন পর্যন্ত তার
পাশের মুসলিমদের জন্যে,
যদি
তারাও না পারে অথবা না করে
তাহলে তাদেরও পাশের মুসলিমদের
জন্যে...
এভাবে,
আল্লাহর
বিধান পুনর্প্রতিষ্ঠায়
প্রয়োজনে সারা বিশ্বের মুসলিমদের
ওপরও জিহাদ ফারদুল আইন হয়ে
যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,
যেদিন
কাফিররা মুসলিমদের স্পেন,
ফ্রান্স,
রাশিয়া,
বুখারা,
সামারকান্দ,
কাশ্মির,
চেচনিয়া,
বসনিয়া-হার্যেগোভিনা,
ফিলিস্তিন,
আফগানিস্থান,
ইরাক,
পুর্ব-তিমুর,
ইরিত্রিয়া,
সোমালিয়া,
আরাকানসহ
শত শত জনপদ মুসলিমদের থেকে
ছিনিয়ে নিয়েছে কিংবা সেখানে
অনুপ্রবেশ ও আক্রমন করেছে
তখন থেকে কি সারা বিশ্বের
প্রতিটি মুসলিমের জন্য জিহাদ
এখনও ফারদুল আইন হয় নি?
আল্লাহর
পথে বের হয় নি এমন সব ইমানদারদেরকে
আল্লাহ এই বলে তাগিদ দিয়েছেন,
হে
ঈমানদারগণ,
তোমাদের
কি হল,
যখন
আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে
তোমাদের বলা হয়,
তখন
মাটি আকড়ে ধর,
তোমরা
কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার
জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে?
অথচ
আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার
জীবনের উপকরণ অতি অল্প। [সুরা
আত-তাওবা
৯.৩৮]
আর,
যে
মনে করে,
আমি
মুসলিম,
আমি
আমার দ্বীনের ওপর আছি;
আর
কে কি অবস্থায় থাকলো তাতে আমার
কি?
ভালো
কথা। কিন্তু দ্বীন-আল-ইসলামে
কি এটা গ্রহনযোগ্য হবে?
মুসলিমদের
জন্য যেগুলো ফরজ অর্থাৎ সলাত,
সওম,
হাজ্জ,
যাকাত,
সৎকাজের
আদেশ,
অসৎকাজের
নিষেধ,
জিহাদ
এরকম যা কিছু আছে সেগুলো সবই
শুধুমাত্র ইবাদাতের জন্যে
নয়;
সমগ্র
মানবজাতির কল্যানের জন্যে।
নফল ইবাদাত ব্যাক্তির নিজের
জন্যে। তাহলে আপনি শুধুমাত্র
নিজের অথবা নিজের পরিবারের
কথা ভেবে কিভাবে আল্লাহর হুকুম
ঠিকমত মেনে চললেন?
আমার
কথা বাদ দিলাম। এদের প্রতি
আল্লাহ বলেছেন,
যদি
বের না হও,
তবে
আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ
আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে
তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।
তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে
পারবে না,
আর
আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
[সুরা
আত-তাওবা
৯.৩৯]যারা আল্লাহর সব বিধান মেনে চললো তারা মুমিন, যারা অস্বীকার করলো তারা কাফির আর যারা উভয় দিক রক্ষা করলো তারা মুনাফিক।
এদের মধ্যে কাফির মুনাফিক উভয়ে যাবে একই স্থানে অর্থাৎ জাহান্নামে; তবে মুনাফিকের স্থান হবে সেখানকার জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। তাহলে দুই কুল রক্ষা করে লাভটা কি হলো? মানুষ মানার ভয়ে সত্য জানতে চায় না; এমনকি জানাতে গেলেও শুনতে চায় না। অথচ আল্লাহ তো জানেন যে, আপনি জানার উপায় থাকা স্বত্তেও চেষ্টা করছেন না। তাহলে হাশরের ময়দানে আল্লাহ আপনাকে ছেড়ে দিবেন বলে মনে করেন কিভাবে?
তারা
কোনো নিন্দাকারীর নিন্দা
পরোয়া করবে না।
কুপথে
চললে তো নিন্দা আসবেই। কিন্তু
এখানে কুপথের পথিকদের কথা
বলা হচ্ছে না,
শুধুমাত্র
আল্লাহর দলের কথা বলা হচ্ছে।
এখন,
কথা
হচ্ছে,
আল্লাহর
দল নিশ্চয় খারাপ কিছু করে না।
কিন্তু,
তারা
ভালো কাজ করলে তাদেরকে নিন্দা
করা হবে কেনো?
এই
প্রশ্নের উত্তর জানার আগে
এটা জানা প্রয়োজন যে,
ভালো
কাজ করলেই একজনকে প্রশংসা
করা হয় কি না। না,
করা
হয় না। আল্লাহ বলেছেন,
মুহাম্মাদ
(সঃ)
মানুষের
মধ্যে সর্বোত্তম। অথচ সারা
বিশ্বে তাকে নিন্দা করে যতো
বই লেখা হয়েছে,
অন্য
কারো জন্যে ততো হয় নি।
আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দ্যাখেন, আজ থেকেই পুরোপুরি রসুল (সঃ) এর দেখানো পথে আল্লাহর সবগুলো আদেশ ও নিষেধ মেনে চলতে শুরু করেন। আপনার পরিবার কিংবা আপনার সমাজ কিংবা আপনার জাতি; কোনো জায়গা থেকে যদি আপনি বিরোধিতা না পান তাহলে নিশ্চিত থাকেন, আপনি আল্লাহর দলে নেই। আমার কথা নয়, আল্লাহর কথা। কারন তিনিই বলছেন, তারা কোন নিন্দাকারীর নিন্দা পরোয়া করবে না। তাদের ওপর যদি নিন্দাই না আসে তাহলে তা পরোয়া করা না করার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং নিন্দা আসবে এতটুকু নিশ্চিত। আপনি তা পরোয়া করছেন কি করছেন না সেটা-ই এখন দেখার বিষয়। আপনি এক আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন ঠিক সেভাবে, যেভাবে সব নাবি-রসুলগন দেখিয়ে গেছেন। জামায়াতে ইসলাম থেকে শুরু করে তাবলিগি জামায়াত পর্যন্ত, কে নাবি-রসুলগনের শিখানো পদ্ধতিতে তাওহীদের দাওয়াত দেয় তা আপনি নিজেই বিবেচনা করে দ্যাখেন।
Point
No. 5 এর
ব্যাখ্যা
''এ
(ক্ষমতাটুকু)
হচ্ছে
আল্লাহর অনুগ্রহ,
যা
তিনি যাকে চান তাকে-ই
দান করেন;
আল্লাহ
প্রচুর দানকারী,
মহাজ্ঞানী।''
ব্যাখ্যার
প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
এতোক্ষন
কুরআনে বর্নিতো বৈশিষ্টগুলোর
ব্যাখ্যা করা হলো। এখন হাদিসে
বর্নিতো বৈশিষ্টগুলোর ব্যাপারে
একটু আলোকপাত করা যাক। বিস্তারিত
ব্যাখ্যা করবো না,
বরং
ওই হাদিসগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টতা
আছে এমন কিছু আয়াত আমরা দেখবো।
ওই হাদিসগুলোতে মোটামুটিভাবে
যে বিষয়গুলোর সাদৃশ্যতা পাওয়া
যায় সেগুলো হলো,
-
বিভিন্ন
প্রকার প্রতিকুল অবস্থাতেও
ওই দলটির আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে না
সরা,
-
সবসময়
বিরোধি পক্ষ থাকা সত্তেও
তাদেরকে পরোয়া না করা,
-
স্বয়ং
আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্তি
ও পরাজিত না হওয়া,
-
সকল
প্রকার বে-দ্বীনি
কাজ থেকে সুরক্ষিত থাকা,
-
কেউ
সাহায্য করুক আর না-ই
করুক কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের
শ্রেষ্ঠ্যত্ব বজায় থাকা।
বে-দ্বীনদের
ওপর কারা বিজয়ী ও সফলকাম
[সুরা
মায়িদা ৫.৩৫]
হে
মুমিনগণ!
আল্লাহকে
ভয় কর,
তাঁর
নিকট ওয়াসিলা সন্ধান কর এবং
তাঁর পথে জিহাদ কর যাতে তোমরা
সফলকাম হও।
[সুরা
আত-তাওবা
৯.২০]
যারা
ঈমান এনেছে,
দেশ
ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে
নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ
করেছে,
তাদের
বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর
কাছে আর তারাই সফলকাম।
[সূরা
মুজাদালা ৫৮.২১]
আল্লাহ
লিখে দিয়েছেনঃ আমি এবং আমার
রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব।
নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর,
পরাক্রমশালী।
[সুরা
আল-ইমরান
৩.১৩৯]
আর
তোমরা হতাশ হয়ো না,
চিন্তিতও
হয়ো না। তোমরাই
হবে বিজয়ী,
তোমরাই
থাকবে উচ্চাসনে;
যদি
তোমরা মুমিন হতে পারো।
[সূরা
মুজাদালা ৫৮.২২]
যারা
আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে,
তাদেরকে
আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে
বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না,
যদিও
তারা তাদের পিতা,
পুত্র,
ভ্রাতা
অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী
হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান
লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে
শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য
শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে
জান্নাতে দাখিল করবেন,
যার
তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা
তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট
এবং তারা আল্লাহর প্রতি
সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল।
জেনে রাখ,
আল্লাহর
দলই সফলকাম হবে।
[সুরা
বাক্বরাহ ২.২১৮]
নিশ্চয়,
যারা
ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত
করেছে আর আল্লাহর পথে জিহাদ
করেছে,
তারাই
আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী।
আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী
করুনাময়।
[সুরা
মায়িদা ৫.৫৬]
আর
যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং
মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ
করে,
তারাই
আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী।
[সুরা
ইউনুস ১০.৬২]
জেনে
রোখো!
নিঃসন্দেহে
(কিয়ামাতের
সময়)
আল্লাহর
বন্ধুদের কোনো ভয় নেই,
আর
তারা চিন্তিতও হবে না।
[সুরা
আন-নুর
২৪.৫২]
যারা
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য
করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর
শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই
কৃতকার্য।
[সুরা
আল-ইমরান
৩.১৫০]
বরং
আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী,
আর
তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম
সাহায্য।
কাদেরকে
শ্রেষ্ঠ্যত্ব
দেওয়া হবে?
গৃহে
উপবিষ্ট মুসলমান-
যাদের
কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ
মুসলমান যারা জান ও মাল দ্বারা
আল্লাহর পথে জিহাদ করে,
তারা
কক্ষনো সমান নয়। যারা জান ও
মাল দ্বারা জিহাদ করে,
আল্লাহ
তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে
দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের
তুলনায় এবং (জিহাদ
ফি সাবিলিল্লাহ তখনো ফরজ ঘোষিত
না হওয়ায়)
প্রত্যেকের
সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা
করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনকে
উপবিষ্টদের উপর মহান প্রতিদানে
শ্রেষ্ঠ করেছেন। [সুরা
আন-নিসা
৪.৯৫]
তোমরা
কি মনে করেছো,
হাজীদেরকে
পানি সরবরাহ আর মসজিদুল-হারামের
নির্মানকাজ ওই ব্যাক্তির
কর্মের সমান,
যে
ঈমান এনেছে আল্লাহ ও শেষ দিবসের
প্রতি এবং জিহাদ করেছে আল্লাহর
পথে;
এই
দুই ব্যাক্তি আল্লাহর দৃষ্টিতে
কখনো সমান নয়;
আর
আল্লাহ জালিম লোকদের
হিদায়াত দান করেন না। [সুরা
আত-তাওবা
৯.১৯]
শেষকথা
কোনো
ইবাদাহ ফারজ হয় না ঈমান ছাড়া।
আর ইমানের প্রথম শর্ত হলো ইলম।
এরপরও ইবাদাহ কবুল হবে না যদি
এতে শিরক থাকে এবং রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতিতে
না করা হয়। এখন যদি এখান থেকেও
কোনো বিষয়ের সমাধান না পাওয়া
যায় তাহলে সাহাবি (রাঃ)-দের
থেকে,
সেখানেও
না পাওয়া গেলে তখন তাবিই,
তাবিইন,
তাবিই-তাবিইন
(রঃ)
এভাবে
তার পরবর্তি আলিম,
তারও
পরবর্তি আলিম এভাবেও না হলে
তখন সমসাময়িক আলিমদের থেকে
সমাধান নেওয়া যাবে। মোটকথা,
তিনি
যে-ই
হন না কেনো,
যদি
কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে প্রমান
সহকারে কোনো সমস্যার সমাধান
দেন তাহলে তার টা গ্রহন করতে
হবে;
অন্যথায়
তা বর্জন করতে হবে,
তাকে
যতোবড় আলিমই বলা হোক না কেনো।
তবে তিনি কুরআন ও সহিহ হাদিস
নিজে কিভাবে বুঝেছেন সেটা
তার দেওয়া সমাধান অনুযায়ি
আমাল করার পুর্ব-বিবেচ্য।
তার বুঝ টা যদি আহাল-উ-সসুন্নাহ
ওয়াল জামাআ (যারা
রসুল ও তার সাহাবা রদিয়াল্লাহু
আনহুমের অনুসারি)
অনুসারে
না হয় তাহলে তার সমাধানও বিনা
বাক্যব্যয়ে বর্জন করতে হবে।
জীবিত
ব্যাক্তি ফিতনা থেকে মুক্ত
থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারে
না;
আমরাও
দিতে পারি না। সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ জামায়া অর্থাৎ
সাহাবা রদিয়াল্লাহু আনহুম
পর্যন্ত সর্বদা ভীত থাকতেন,
কখন
না তারা শাইতনের প্ররোচনায়
পড়ে যান আর ইমান হারান। তাদের
তুলনায় আমরা অতি নগন্য। আমরা
আল্লাহর কাছে আমাদের ইমান
নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে দূরে
থাকার জন্যে দুয়া চাই। তবে
ইনশাল্লাহ,
যতক্ষন
পর্যন্ত ইমানের ওপর থাকবো,
ততক্ষন
পর্যন্ত তাওহীদের দাওয়াতের
ফারজিয়াত আদায় থেকে পিছাবো
না এবং এই পথে বিন্দুমাত্র
ছাড় দিবো না।দাওয়াহ ক্ষেত্রবিশেষে
ফারদুল আ'ইন
অথবা ফারদুল কিফায়া হতে পারে।
আজকের মুসলিমদের জন্যে তা
ফারদুল আ'ইন।
আল্লাহর
প্রতি দাওয়াত দিতে আল্লাহ
নিজে হুকুম করেছেন,
...
আপনি
ডাকুন আপনার প্রভুর প্রতি,
এবং
কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত
হয়েন না। [সুরা
আল-ক্বসাস
২৮.৮৭]
...
আপনি
প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা
আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের
পরওয়া করবেন না। [সুরা
আল-হিজর
১৫.৯৪]
এবং
দা'ইয়ীদেরকে
করেছেন মর্যাদাবান,
আর
কার কথা তার চেয়ে বেশী ভালো
যে আহবান করে আল্লাহর প্রতি
এবং ভালো কাজ করে আর বলে,
''আমি
তো নিশ্চয়ই মুসলিমদের
মধ্যেকার।''
[সুরা
ফুসসিলাত ৪১.৩৩]
আমাদের
প্রথম দায়িত্ব পৌছে দেওয়া;
আমরা
পৌছে দিলাম। মানা,
না
মানা আপনার ইচ্ছা। আমরা আল্লাহর
এ হুকুম মেনে নিলাম,
আর
তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই
করো,
যে
পর্যন্ত না ফিতনার অবসান হয়
এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত
হয়।...
[সুরা
বাক্বরাহ ২.১৯৩]
ইনশাল্লাহ,
আমরা
ততোক্ষন পর্যন্ত আল্লাহর
রাস্তায় সম্ভব সবদিক থেকে
সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো,
যতক্ষন
পর্যন্ত ফিতনা দূর না হয়।
যে
ব্যক্তিকে ইসলামের দিকে দাওয়াত
দেওয়া সত্তেও আল্লাহ সম্পর্কে
মিথ্যাচার চালায়,
তার
চেয়ে অধিক যালিম আর কে আছে?
আল্লাহ
যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন
করেন না। [সুরা
আস-সফ
৬১.৭]