Saturday, April 16, 2011

poristhitir shikar


আমি "পরিস্থিতির শিকার"- কোনো মানুশ এই কথাটি বলার মাধ্যমেই প্রমান করে যে, সে উক্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্যতা রাখে না । এই মানুশগুলোকে আমরা যেভাবে মুল্যায়ন করতে পারি তা হলো- প্রথমত এরা মানুশ হিসাবে আযোগ্য দ্বিতীয়ত এরা ধৃস্টতা অথবা দুর্বলতা প্রমান করছে ।

কেনো এরা মানুশ হিসাবে আযোগ্য ?
ধরুন, আপনার বাড়িতে ডাকাতরা আক্রমন করলো । আপনি তাদের প্রতিরোধের সামান্য ব্যবস্থাও নিলেন না, তাদের হাত থেকে বাচার জন্যে অন্যের সাহায্য চেয়ে একটা চিৎকারও দিলেন না । আপনি বলতে পারেন- এগুলো করলে তারা আমার ক্ষতি করতে পারতো ।
আমি বলি, কি উপকারটাই না তারা করে গেলো আপনার জন্যে !
আপনার যা অবস্থা তাতে দেখছি, কেউ যদি আপনাকে কাটাচামচ ধরেও আপনার সব কিছু লিখে দিতে বলে আপনি তাও করতে সদা প্রস্তুত ! মানুশ হিসাবে আপনার যোগ্যতা আপনি নিজেই বিবেচনা করুন । Shame! Shame! Shame!
যা রক্ষা করার ক্ষমতা নেই তা প্রস্তুত করেন কেনো ? কেনো পুর্বপ্রস্তুতি গ্রহন করেন নি ? এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকে কি কোনো ধারনাই আপনার ছিলো না ? আপনি কি এতদিন পৃথিবিতে বাস করতেন না ?

রোগ-বালাই, দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মানব-সৃস্ট দুর্যোগগুলোর সাথে তুলনা করবেন না দয়া করে ।
মানব-সৃস্ট পরিস্থিতি আর ভাগ্য সম্পুর্ন এক জিনিস নয় ।

এক সাপ গিয়েছিলো পিরের কাছে মুরিদ হতে । পির রাজি হলেন না সাপকে মুরিদ বানাতে । কিন্তু সাপ নাছোড়বান্দা । অবশেষে পির রাজি হলেন । তবে শর্ত হলো, সাপকে বায়াত দিতে হবে যে, সে কাউকে ক্ষতি করতে পারবে না । সাপ তাতেও খুশি । বায়াত দিলো, মুরিদ হলো ।
এক রাতে সাপ ধানখেতের পাশে জিকির করছিলো । কৃষকরা সে সময় ধান কেটে আটি বাধছিলো । সামান্য আলোয় বুঝতে না পেরে একসময় সাপটিকেই দড়ি ভেবে তা দিয়ে আটি বাধলো । সাপের মেরুদন্ড যায় যায় । কৃষক বাড়িতে ধানের আটি রাখার পর কোনোমতে নিজেকে মুক্ত করে সাপ গেলো পির-বাবার কাছে
পির সাপের এ হাল দেখে বললো, "পাগলা ! তোর এ দশা হইলো ক্যামোনে ?"
সাপ বৃত্তান্ত খোলসা করার পর পির বললো "পাগলা ! আমি তোরে নিশেধ করেছিলাম দংশাতে, ফোস করতে তো নিশেধ করি নি । এ তো তোর-ই কর্ম-দোশ !"

এই পির আর এই সাপ আমাদের সমাজে বহু আছে । একটু চেখে দেখলেই হয়তো দূরে আর খোজ করা লাগবে না ।

কেনো এরা ধৃস্ট অথবা দুর্বল ?
এখানে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যেই মানুশটি পরিস্থিতির দোহায় দিচ্ছে সেই মানুশটি উক্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকে ধারনা রাখতো কিনা । যদি ধারনা রাখা স্বত্বেও পরিস্থিতির শিকার হওয়ার দোহায় দেয় তাহলে সে চরম নির্লজ্জ ও মহা ধৃস্ট । তার জন্যে ক্ষমা থাকাটা মানবতা বিরোধি ।
আর যদি সেই মানুশটি উক্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকে ধারনা না রাখার ফলে কোনো অন্যায় করে ফেলে তাহলে সে এই অন্যায়ের জন্য যাদের কাছে দায়বদ্ধ তাদের কাছে বিনিতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিবে । এই মুহুর্তে তাকে ক্ষমা না করাটা মানবতা বিরোধি । এখন যদি সে ক্ষমা না চায় তাহলে বুঝতে হবে মানুশটি চারিত্রিকভাবে প্রচন্ডমাত্রায় দুর্বল । ক্ষমা চাওয়ার মতো সৎ-সাহস নেই । তার ওপর আস্থা রাখা, তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা, তার কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অথবা তার কোনো সাক্ষ্য গ্রহন করা অনুচিত । ছোট ছোট কাজে বারবার স্যরি বলা আর কোনো অন্যায় সংগঠিতো হওয়ার পর তার দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করার হিম্মত দেখানোর মাঝে রয়েছে আলোকবর্ষের ব্যাবধান । এদের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেনি আছে যারা মনে করেন, ক্ষমা চাইলে তাদের আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হয়ে যাবে যদিও এদের শ্লীলতাহানি হলেও আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হয় না বরং সেক্ষেত্রে তারা হন "পরিস্থিতির শিকার" ! Shame! Shame! Shame!

কিছু সামাজিক প্রেক্ষাপট
আমাদের সমাজে বন্ধু-বান্ধবি, দেবর-ভাবি, শ্যালিকা-দুলাভাই, চাচাতো-মামাতো-খালাতো-ফুপাতো ভাই-বোনদের অবাধ মেলামেশার ফলে অসংখ্য মানুশ ইচ্ছায়-আনিচ্ছায় প্রতিনিয়ত তাদের আত্মসম্মান হারাচ্ছে । লোকলজ্জার ভয়ে সবকিছু লুকাতে বাধ্য হয় । আর জানাজানি হয়ে গেলে শুরু হয় একপক্ষের ওপর আরেক পক্ষের অযৌক্তির দোষাদোষি আরপ । শেষমেশ এরা 'পরিস্থতির শিকার' । এই পশুগুলো কি 'পরিস্থতির শিকার' ?
এরকম বহু দুলাভাই আর দেবর আছে এ সমাজে যারা শ্যালিকাকে অথবা ভাবিকে প্রথমে বোন আর পরে বৌ বানিয়ে নেয় । এরকম বহু শ্যালিকা অথবা ভাবিও আছে যারা দুলাভাইকে আর দেবরকে প্রথমে ভাই আর পরে দ্বিতীয় স্বামী বানিয়ে নেয় । বন্ধু-বান্ধবি আর কাজিন শ্রেনির কথা না হয় না-ই বললাম ।
ও আমার জাতি ! আমি প্রশ্ন করতে চাই এরা কি পরিস্থিতির শিকার ? এই শয়তানগুলো পরিস্থিতিকেই তাদের শিকারে পরিনত করে নিয়েছে । Shame! Shame! Shame!

নারীরা জনসম্মুক্ষে দেহ, পোশাক আর অলংকারের উত্তেজক প্রদর্শনী করলে কোনো দোষ নেই, তাহলে পুরুষরা তাদের প্রদর্শনীর মুল্যায়ন করলে দোষটা কোথায় ? তাছাড়া, এ নারীরা এসব প্রদর্শনী করছে তো আর নারীদেরকে দেখানোর জন্যে না । এক্ষেত্রে কিভাবে একটা নারী পরিস্থিতির শিকার হলো যেখানে সে নিজেই পরিস্থিতিটা সৃস্টি করলো ? আর, দাড়-কাকের সামনে পাকা আম ঝুলালে তো দাড়-কাক তাতে ঠোকরাবেই; এ তো সবারই জানা । এতে দাড়-কাকের কি দোষ ? নাকি চরম নির্লজ্জাটাকে আরও একটু বাড়িয়ে বলবে, "আমরা যা-ই করি না কেনো ওরা বলবে কেনো ? দেখবে কেনো ?" আরে ! তোমরা দেখাতে পারলে ওরা তা দেখতে পারবে না কেনো ? Shame! Shame! Shame!
সম-অধিকারের প্রশ্ন আসলে এ কথা বলতেই হয়- ও মেয়েরা, তোমরাও আদম-টিজিং শুরু করো । তাহলে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে । তোমরা হয়তো বলবে, "আমরাও কি ওদের মতো নাকি ?"
ও নারি ! তোমরা ওদের মতো হলেও তা করতে না ।
কিছু নারি এমনই, তারা সম-অধিকারের কথা বলে রাজপথে প্রদর্শনি করে, অথচ নারি কোটায় চাকরি নেওয়ার সময় এটাকে তাদের প্রতি করুনা মনে করে না । Shame! Shame! Shame!
বাজারে নাকি মশারি ছাড়া ওড়না পাওয়া যায় না । পাওয়া যাবে কি করে ? বাজার তো নির্ভর করে চাহিদার ওপর; তোমাদের চাহিদাই তো ওই মশারিগুলো ।

সেলফোনের ক্যামেরায় পোজ দেওয়ার সময় ভাবার প্রয়োজন হয় না যে, এর পরিনাম কি হতে পারে ? যখন তোমার একান্ত ব্যক্তিগত মুহুর্তগুলোর ঠিকানা হয় এলাকার ছেলেদের সেলফোন আর ইন্টারনেটের ওয়েবপেজগুলো, তখন সেটা হয় "পরিস্থতির শিকার" ! তখন দোষ হয় যারা এটা ছড়ালো তাদের ! কতবড় জঘন্য এই মানুশগুলো; কত সহজে এই মানুশগুলো নিজেদের কর্মফলগুলোকে অন্যের ওপরে দোষ হিসেবে চাপাতে পারে ! Shame! Shame! Shame!

আর একটা অতি সাধারন "পরিস্থতির শিকার" হচ্ছে, সেলফোন । বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার সুত্রতায় শুরু করলেন ফোনালাপ, কবে যে ভুলে গেছেন আপনি কারো স্বামী অথবা কারো স্ত্রী কিংবা কারো ভাই অথবা কারো বোন । যখন ভুল ভাঙলো তখন দেখলেন অনেক দেরি করে ফেলেছেন, প্রিয়জন চলে গেছে বহু দূরে, হয়তো ভেঙ্গে ফেলেছেন অন্য কারো স্বপ্ন অথবা হয়েছেন প্রতারনার শিকার কিংবা ব্ল্যাকমেইলিং-এর শিকার । এখানেও কি আপনি "পরিস্থিতির শিকার" ? Shame! Shame! Shame!

একসময় শুরু হয় অপমানবোধ, হতাশা, একাকীত্ব, নিজের ওপর থেকে এবং অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারানো, সবশেষে নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেওয়া, হয়তোবা একসময় এসবকিছু আর সইতে না পেরে আত্মহত্যা ।

কোনো মানুশের বিশেষ করে কোনো নারীর জীবনে এই ঠেকাগুলো যদি আসে তখন দেখবেন সে হয়ে গেছে আপাদমস্তক পরহেজগার ! যে কিনা পর্দা করার কাপড় পেতো না, সে-ই পরা শুরু করেছে নিকাবসহ বোরখা । কিন্তু মানুশের কটুকথা পিছু ছাড়ে না, এদের পুর্ব-জীবনের কর্মের কারনেই পর্দার পোষাককে কখনো হতে হয় উপহাসের পাত্র । Shame! Shame! Shame!
যেই মানুশটি ঠেকে শিখলো আর যে অনুধাবন করে শিখলো তারা কি কখনো এক হতে পারে ? Never!
অপমান থেকে বাচার জন্যে নয় বরং সত্যিই যদি এরা শিক্ষা গ্রহন করে ফিরে এসে থাকেন তাহলে তাদের প্রতি বিবেকবানদের সকলের উচিত এই প্রার্থনা করা- সৃস্টিকর্তা যেনো তাদের পুর্বের অপরাধ ক্ষমা করেন আর সব ভালো কাজের উত্তম বিনিময় দান করেন । তাদের প্রতি আমাদের সহানুভুতিশীল হওয়া উচিত । Ameen.

প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতিঃ জীবন মানুশকে বারবার সুযোগ দেয় না; ভবিশ্যতের ব্যাপারে সতর্ক হোন । বাইরের পর্দাই পর্দা নয়, ভেতরেরটাও সমান গুরুত্বপুর্ন । একটা ছাড়া অন্যটা অর্থহিন । বাইরের পর্দা সমাজের বহু শ্রেনির মানুশ করে ।

জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে আমরা যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তার প্রায় সবই আমাদের জন্যে প্রাথমিক ভাগ্য অথবা শয়তানের প্ররোচনা । প্রাথমিক ভাগ্য এবং শয়তানের প্ররোচনা আমাদের জন্যে গুরুত্বপুর্ন পরীক্ষা । শয়তানের প্ররোচনায় এবং প্রাথমিক ভাগ্য আনুযায়ি আমরা কি করবো তা সম্পুর্ন আমাদের ওপর নির্ভরশিল । এটি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ । এ অংশের ওপরই নির্ভর করে চুড়ান্ত ভাগ্যের অধিকাংশ ফলাফল ।

শুধুমাত্র মুসলিমদের প্রতি
পরিস্থিতির ইচ্ছা অনুযায়ী কোনো কিছু ঘটার কথা বলা ইসলাম-পরিপন্থী । সুতরাং যেখানে পরিস্থিতির নিজের কোনো ইচ্ছাই নেই, পরিস্থিতি নিজে থেকে কিছু ঘটানোর ক্ষমতাই রাখে না সেখানে আপনি "পরিস্থতির শিকার" হন কিভাবে ? সুতরাং এরকম কিছু বলা ইসলাম-পরিপন্থী ।

পরিশেষে,
কাউকে কস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য এটি লেখা নয় । বরং যারা ভুল পথে চলছেন এবং যারা এখনও যাননি তাদের উভয়ের জন্যেই সিরত-আল মুসতাকিম দেখানোর জন্যে । সম্মান একবার হারালে তা তো আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবেনা । ভুল একবার করে ফেললে ঠিক ওই ভুলটাকেই শুধরানো তো আর সারা জীবনেও সম্ভব হবে না । সর্বোচ্চ যা সম্ভব তা হলো সতর্ক থাকা এবং পরবর্তিতে ওই ভুল আর না করা । আপনি কি চান একবারের জন্যেও নিজের সম্মান হারিয়ে সুপথে ফিরতে । অথচ ফিরে আসার পরও সারাজীবন অন্যের করুনার পাত্র হয়ে থাকতে হবে আপনাকে । কোনো মানুশ কি চাইতে পারে এ জীবন ? যদি আপনি মানুশ হয়ে থাকেন, তাহলে কি আপনি নিজের, নিজের কোনো ভাইয়ের অথবা কোনো বোনের এরকম করুনার জীবন চাইতে পারেন ?

No comments:

Post a Comment