Saturday, April 16, 2011

Fate and Destiny

প্রথমেই আপনাকে একটা প্রশ্ন করি- আচ্ছা, আপনি কি আগে থেকে জানতেন যে আজ এই সময়ে এই লেখাটি আপনি পড়বেন ? আশা করা যায়, আপনি জানতেন না । ধরে নেওয়া যায়, অনেকগুলো লেখার মধ্য থেকে এই লেখাটি আপনার নজরে পড়লো এবং লেখাটি আপনার পড়তে ইচ্ছা হলো । এখন আপনি পড়া চালিয়ে যাবেন নাকি অন্য কিছু করবেন তা সম্পুর্নভাবে আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল । যদি এটা পড়া শেষ করতে পারেন তাহলে আপনার মনে কি প্রতিক্রিয়া হবে বা কি পরিবর্তন হবে তা আপনি এখনও জানেন না ।
লক্ষ্য করুন- আজকে এই সময়ে এই লেখাটি আপনার নজরে পড়াটি ছিলো আপনার সাধারন ভাগ্য বা প্রাথমিক ভাগ্য। পড়াটি চালিয়ে যাওয়া অথবা না যাওয়া ছিলো আপনার ইচ্ছাধীন । পড়াটি শেষ করার পর আপনার কি প্রতিক্রিয়া বা পরিবর্তন হলো এটা আপনার চুড়ান্ত ভাগ্য ।

একইভাবে একজন মানুশ একটি মুশরিকের পরিবারে জন্মগ্রহন করলো; তার বিবেক দিয়ে সে বুঝলো স্রস্টা একজন । এখন মানুশ হিসাবে সে স্বাধীন- সে এই মুশরিকদের সাথে থাকবে নাকি এক স্রস্টার দিকে ফিরে যাবে ।
এখানে, মুশরিকের পরিবারে জন্মগ্রহন করাটা ছিলো ব্যাক্তিটির সাধারন ভাগ্য বা প্রাথমিক ভাগ্য ।

ধরুন, আপনি বাসে কোথাও যাচ্ছেন । হঠাত আপনার ইচ্ছা হলো বাস থেকে নামতে । একটি বাস-স্ট্যান্ডে নেমে আপনি সামনের মেঠো পথ ধরে হাটছেন । একসময় দেখলেন যে, পথটি দুই দিকে বিভক্ত হয়ে চলে গেছে । এখন আপনি কোন পথটি বেছে নিবেন তা আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে । ওই পথটি ধরেই হেটে যাবেন নাকি ফিরে এসে অন্য পথটিতে যাবেন অথবা আবার বাস-স্ট্যান্ডে ফিরে যাবেন তা সম্পুর্নভাবে আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল । ধরুন, আপনি বাস-স্ট্যান্ডে ফিরে এলেন এবং বাসে করে বাড়ি ফিরে এলেন । পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলেন- আপনি যে সময় মেঠো পথটি ধরে হাটছিলেন, তার কিছুক্ষন পর দু'দিকে চলে যাওয়া পথদু'টির একটিতে ডাকাতি হয়েছে, আর অপর পথটি ধরে কিছু দূরে যেতেই নাকি আপনার এই বন্ধুটির বাড়ি !
ভালভাবে লক্ষ্য করুন- আপনার সামনে দুইটি পথ ছিলো । কোন পথটি বেছে নিতেন তার সম্পুর্ন এখতিয়ার আপনার ছিলো । আপনি যদি আপনার বন্ধুর বাড়ির পথটি বেছে নিতেন তাহলে হয়তো আপনার ভাগ্যে ভালো আপ্যায়ন থাকতো আর যদি ওই পথটি বেছে নিতেন যে পথে ডাকাতি হয়েছে তাহলে হয়তো ডাকাতির কবলে পড়া আপনার ভাগ্যে থাকতো ।

সুতরাং , একজন মানুশ কোন সময় কোন অবস্থার সম্মুখীন হবে তা সে আগে থেকে জানে না । এটি হচ্ছে একজনের সাধারন ভাগ্য বা প্রাথমিক ভাগ্য। কিন্তু একটি অবস্থার সম্মুখীন হয়ে সে কি করবে সেটার ব্যাপারে সে স্বাধীন ; আর এ অবস্থায় সে যা করছে তার ওপরেই তার ভাগ্যের অনেকটা নির্ভরশীল, তবে সম্পুর্নটা নয় । চুড়ান্ত ফলাফল অবশ্যই আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল ।

আর এক প্রকার ভাগ্য আছে যা কোনোভাবেই মানুশের ইচ্ছাধীন নয় । এটা কর্মফল, পরীক্ষা অথবা আগাম বিনিময় হিসাবে মানুশের ওপর পতিতো হয় । ভীতি, রোগ-শোক, খাদ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি, সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি, প্রান-বিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে স্রস্টা এগুলো করে থাকেন ।
ধরুন, আপনি একটা ব্যাবসা শুরু করতে যাচ্ছেন । ব্যাবসাটি লাভজনক হওয়ার সব শর্ত আপনি পুরন করলেন । তারপরও আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন ।
উদাহরন হিসাবে, মনে করুন, আপনি গরুর খামার করেছেন । সবকিছু ঠিকমতো চলছিলো । একদিন প্রচন্ড এক বজ্রপাতে খামারের সবগুলো গরু মারা গেলো, কিংবা অজানা কোনো রোগে খামারের সবগুলো গরু মারা গেলো ।
আবার ধরুন, আপনি একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলছেন । জয়ের জন্যে আপনাদের প্রয়োজন ৬ বলে ২ রান, হাতে আছে ৩ উইকেট । খেলার এই যখন অবস্থা, ম্যাচটি তখন নিজেদের মনে করতেই পারেন । কিন্তু দেখা গেলো বিপক্ষ দলের বোলারটি তার প্রথম ৩ বল থেকে হ্যাটট্রিক পেয়ে গেলেন ।
একইভাবে, একজন ব্যক্তি খুব সাবধানে রাস্তা থেকে নেমে হাটছিলেন যাতে কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে না হয় । অথচ একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তা থেকে বাইরে এসে তাকেই আঘাত করলো ।

এই দুই প্রকার ভাগ্যের উদ্দেশ্য একই- তা হচ্ছে, পরীক্ষা । পার্থক্য হচ্ছে- এক প্রকার ভাগ্যে আপনাকে কর্ম দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করতে হয় আর অপরটিতে আপনার ওপর পতিতো ফলাফলের প্রতি যথাযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয় । আমরা যে সৃস্টির সেরা তা আমাদেরকে এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমেই প্রমান করতে হবে ।

আমাদের মনে রাখা উচিত
- স্রস্টার মানুশ সৃস্টির উদ্দেশ্য এই যে, সৃস্টি হিসাবে সে সবসময় এবং সবক্ষেত্রে স্রস্টার প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন করছেন কিনা তা পরীক্ষা করা ।
- মানুশের জন্যেই পৃথিবির বাকি সবকিছু সৃস্টি করা হয়েছে । মানুশ যে সৃস্টির সেরা তা প্রমান করাটা হচ্ছে প্রতিটি মানুশের সারা জীবনের দায়বদ্ধতা ।
- জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে আমরা যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হই তার প্রায় সবই আমাদের জন্যে প্রাথমিক ভাগ্য অথবা শয়তানের প্ররোচনা ।
- প্রাথমিক ভাগ্য এবং শয়তানের প্ররোচনা আমাদের জন্যে গুরুত্বপুর্ন পরীক্ষা ।
- শয়তানের প্ররোচনায় এবং প্রাথমিক ভাগ্য আনুযায়ি আমরা কি করবো তা সম্পুর্ন আমাদের ওপর নির্ভরশীল । এটি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ । এ অংশের ওপরই নির্ভর করে চুড়ান্ত ভাগ্যের অধিকাংশ ফলাফল ।
- সকল কাজের চুড়ান্ত ফলাফলই চুড়ান্ত ভাগ্য ।
- সকল কাজের চুড়ান্ত ফলাফল আল্লাহর ওপরই নির্ভরশীল ।
- প্রতিটি মানুশের ভাগ্য লিখিতো আছে । তবে মানুশ চাইলে নিজের কর্মের মাধ্যমে তার অধিকাংশই পরিবর্তন করতে পারে ।
- শয়তানের প্ররোচনাকেও প্রাথমিক ভাগ্য হিসাবে মনে করা উচিত । তাহলে স্রস্টা যে উদ্দেশ্য আপনাকে সৃস্টি করেছেন তা বস্তবায়ন করা এবং জীবনের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি আপনার জন্যে সহজ হবে ইনশাল্লাহ ।
- সবক্ষেত্রে নিজের মনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার চেস্টা করা, মনকে নিজের নিয়ন্ত্রক হতে না দেওয়া ।

No comments:

Post a Comment